আধুনিক বিশ্বে দিন দিন বাড়ছে বৈদ্যুতিক গাড়ির (ইভি) ব্যবহার। কিন্তু এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে। ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান অবাধে সড়ক-মহাসড়ক দাপিয়ে বেড়ালেও নানা জটিলতায় এ খাতে নেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। এমনকি মাত্রাতিরিক্ত নিবন্ধন ফিও নিরুৎসাহিত করছে ক্রেতাদের।
পৃথিবীর অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর ২ কোটির বেশি জনসংখ্যার ঢাকা। বিপুলসংখ্যক মানুষের যাতায়াতে ব্যবহৃত গাড়ির কালো ধোঁয়ার বিরূপ প্রভাবে দিন দিন মেগাসিটির পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতিকে করে তুলছে অসহনীয়।
এমন পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্বের অনেক শহর এর মধ্যেই বৈদ্যুতিক যানকে প্রাধান্য দিতে শুরু করেছে। প্রথাগত গ্যাসোলিন-চালিত যানগুলোর তুলনায় একে অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন আর কার্যকর বিকল্প হিসেবেও মনে করা হয়।
তবে বাংলাদেশের চিত্রটা ভিন্ন। আইনের দুর্বলতার সুযোগে একদিকে ব্যাটারি চালিত তিন চাকার যান অবাধে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে সড়ক থেকে মহাসড়ক। অন্যদিকে প্রতি কিলোওয়াটকে ২০ সিসি ইঞ্জিন ক্ষমতার সমান নির্ধারণ করে বিআরটিএ একটি ১৫০ কিলোওয়াটের বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন ফি করে রেখেছে বিলাসবহুল পেট্রোলচালিত গাড়ির সমান। এমন উচ্চ নিবন্ধন ফি এবং আমদানি শুল্কের মতো আর্থিক বাধাগুলো দেশে ইভি বিপ্লবের পথে বড় বাধা।
সাধারণ মানুষ বলছেন, ইলেকট্রিক বাস রাস্তায় নামলে কালো ধোঁয়ার পরিমাণ কমবে, ভাঙাচোরা বাসের দৌরাত্ম্য কমবে। মানুষ সুস্থভাবে বাসে চলাফেরা করতে পারবে।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ঢাকার রাস্তায় ৮০টি ও চট্টগ্রামের রাস্তায় ২০টি বৈদ্যুতিক বাস চালুর কথা ছিল। ২০১৯ সালে সেই প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখন পর্যন্ত দেশের কোথাও বৈদ্যুতিক বাসের দেখা নেই। অন্যদিকে, সারাদেশে ইলেক্ট্রিক ভেহিকল বা ইভি চার্জিং স্টেশন মাত্র ১৪টি। আর পাবলিক চার্জিং স্টেশন নেই বললেই চলে। অর্থাৎ বলাই যায় এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর একটি হলো চার্জিং সুবিধাসম্পন্ন অবকাঠামোর অভাব।
এ অবস্থায় উন্নতি আনতে সমর্থনমূলক অবকাঠামো, নীতিমালায় পরিবর্তন ও ইলেকট্রিক বাস নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এম শামসুল হক। তিনি বলেন, বৈদ্যুতিক গাড়িকে স্বাগত জানাতে হবে। বাস ও কমার্শিয়াল গাড়িগুলোকে বৈদ্যুতিক গাড়িতে রূপান্তরিত হবে।
এদিকে দেশে ইলেকট্রিক বাস-নির্ভর গণপরিবহন ব্যবস্থা চালুর পথকে সুগম করার দিকে অন্তর্বর্তী সরকার এগোচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও বন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশই বৈদ্যুতিক গাড়ির দিকে ঝুঁকছে। বাংলাদেশেও এ ধরনের গাড়ি চলাচলে নীতি প্রণয়ন করা হবে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ এর জানুয়ারি থেকে বিক্রি শুরু হয়ে ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ নিবন্ধিত ইভির সংখ্যা মাত্র ৩০০টি।