যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কয়েকটি দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের সম্পদ অনুসন্ধানের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। অনুসন্ধানে এসব দেশে সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেলে শুরু হবে পরবর্তী কার্যক্রম। এ ক্ষেত্রে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্টের (এমএলএআর) আওতায় তথ্য চেয়ে চিঠি দেবে সরকার। তার ভিত্তিতে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনাসহ বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএফআইইউয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশের বাইরে বেনজীর আহমেদের সম্পদ আছে কি না, তা জানতে চেয়ে কয়েকটি দেশে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সব দেশের নাম বলা যাচ্ছে না। ওই সব দেশ থেকে কোনো তথ্য পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, প্রাথমিকভাবে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্য সাধারণত আদালত বা অন্য কোনো সংস্থার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে উপস্থাপন করা যায় না।
ফলে কোনো দেশে তাঁর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেলে পরে এমএলএআরের আওতায় সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে আবার তথ্য চাইতে হবে। এরপর পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে একবার কেউ অর্থ পাচার করলে তা ফেরত আনা অনেক জটিল। এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ছাড়া আর কারো পাচার করা অর্থ ফেরত আনার নজির নেই।
জানা গেছে, বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জা, দুই মেয়ে ফারহিন রিসতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৩৩টি অ্যাকাউন্টের সন্ধান মিলেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সঞ্চয়ী, মেয়াদি, এসএনডি আমানত হিসাব। কিছু ঋণ হিসাবও আছে। অ্যাকাউন্ট জব্দ কার্যকরের আগেই আমানত হিসাব থেকে নগদ টাকা উত্তোলন কিংবা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। অ্যাকাউন্ট জব্দ হতে পারে—বিষয়টি তিনি আগেই জেনে গিয়েছিলেন, নাকি ধারণা থেকে সরিয়ে ফেলেছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
বিএফআইইউয়ের ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক সংগঠন এগমন্ট গ্রুপের সদস্য দেশগুলো এগমন্ট সিকিউর ওয়েবের (ইএসডাব্লিউ) মাধ্যমে তথ্য বিনিময় করে। এ ছাড়া নন-এগমন্ট সদস্য দেশগুলোর সঙ্গেও তথ্য বিনিময় করে বিএফআইইউ। এগমন্টের মাধ্যমেই সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের সম্পদের খোঁজ চেয়েছি আমরা।’
২০২২-২৩ অর্থবছরে বিএফআইইউ বিদেশি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা থেকে ২২টি অনুরোধ পেয়েছে এবং সেই অনুযায়ী তথ্য প্রদান করেছে। পাশাপাশি সন্দেহজনক লেনদেন বা অর্থপাচারসংক্রান্ত তথ্যের জন্য বিদেশি এফআইইউকে ৯০টি অনুরোধ করেছে বাংলাদেশি গোয়েন্দা সংস্থাটি। গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন দেশের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থার কাছে ৫৪৯টি তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ। বাৎসরিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচারসংক্রান্ত তথ্য চাওয়ার ঘটনা ক্রমে বাড়ছে।
উল্লেখ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৭৪টি আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে গঠিত এগমন্ট। এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য ও ইউনাইটেড আরব আমিরাত অন্যতম।
বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) তথ্যের ভিত্তিতে এ পর্যন্ত অর্থপাচারের ৫৯টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে দুদক করেছে ৪৭টি মামলা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মধ্যে সিআইডি ১০টি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুটি মামলা করেছে। সব মামলাই চলমান। এখন পর্যন্ত সিঙ্গাপুর থেকে আরাফাত রহমান কোকোর ২০ লাখ ৪১ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার ফেরত আনা সম্ভব হয়েছে। এরপর আর কোনো অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হয়নি।