দরজায় কড়া নাড়ছে বিজয় দিবস। তারপরই বড়দিন, খ্রিস্টীয় নববর্ষ। উৎসবের এই দিনগুলোর বাজার ধরতে প্রতি বছরের মত এবারও এই সময়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন ফুলের রাজধানীখ্যাত যশোরের গদখালির ফুলচাষিরা। সারাবছর কমবেশি ফুল বিক্রি হলেও মূলত ডিসেম্বর থেকে মার্চ- মাস সবচেয়ে বেশি বেচাকেনা হয়। এ বছরও ভাল ফুল বিক্রির প্রত্যাশা তাদের।
ফুলচাষি ও বিপণনে জড়িত ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি বছরের গ্রীষ্মে বেশ কয়েকবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে যশোরে। সেই সঙ্গে বর্ষা ঘিরে ছিল দুই দফা অতিবৃষ্টির দাপট। এসব কারণে যশোরের গদখালির ফুলচাষিদের ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তারা বর্তমানে ফুল ক্ষেতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন, ১ জানুয়ারি খ্রিস্টীয় নববর্ষ, ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্তবরণ উৎসব, ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালবাসা দিবস, ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানকে লক্ষ্য করে মোটা অংকের ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে থাকে চাষিরা।
যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, এ বছর সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পর অসময়ে বৃষ্টিতে ফুলচাষিরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে চলতি বছর মৌসুমের চার মাসে গদখালি থেকে ১০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমরা আশাবাদী। আসন্ন বিজয় দিবসকে ঘিরে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন কোটি টাকা। আর সারাবছর ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫০০ কোটি টাকা।
যশোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে ফুলের রাজধানী খ্যাত গদখালীর ছোট্ট এ বাজার। সূর্য ওঠার আগেই প্রতিদিন চাষি, পাইকার ও মজুরের হাঁকডাকে মুখর হয়ে ওঠছে।
পাইকারদের কেনা ফুল সকাল থেকেই বিভিন্ন পথের বাসের ছাদে স্তূপ করে সাজানো হচ্ছে, পাঠানো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। ঢাকা-চট্টগ্রামের মত বড় শহরে ট্রাক-পিকআপ ভ্যান ভরে ফুল যাচ্ছে।
প্রতিদিন গড়ে অর্ধকোটি টাকার ফুল বিকিকিনি হচ্ছে জানিয়ে আব্দুর রহিম বলেন, দেশে বিভিন্ন উৎসবে যে পরিমাণ ফুল বেচাকেনা হয়, তার ৭৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় যশোরে। এবার চাহিদা বেশি, চাষিরাও আগাম প্রস্তুতি রেখেছেন। এই মুহূর্তে ফুলের দাম কম তারপরও বেচাকেনা ভাল হওয়ায় আমরা খুশি। উৎসবকে সামনে রেখে ফুলের উৎপাদন, চাহিদা ও দাম-সবই ভাল হবে এমনটি আশা করছেন এ অঞ্চলের ফুলচাষি ও ব্যবসায়ীরা।
গদখালির ফুলচাষি সাইফুল ইসলাম এ বছর এক বিঘা জমিতে জারবেরা ও রজনীগন্ধার চাষ করেছেন। তিনি বলছিলেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে ফুল চাষিদের জন্য সেটা কাল হয়ে দাঁড়ায়। আমরা এখন ফুলের ভালো দাম না পাওয়ার শঙ্কায় ভুগছি। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকলে অনুষ্ঠান বা জাতীয় দিবসগুলো জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপন হয় না। তাই ক্রেতা পর্যায়ে আমাদের ফুলের চাহিদা ও বিক্রি কমে যায়। তারপরও বাজার ধরার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি, দিবসগুলোতে ফুলের দাম আরো বাড়বে।
ঝিকরগাছার নন্দী ডুমুরিয়া গ্রামের ফুলচাষি গোলাম রসুল বলেন, এবার তিনি ছয় বিঘা জমিতে গোলাপ, জবা, রজনীগন্ধা, গ্ল্যাডিওলাসের পাশাপাশি জারবেরার চাষ করেছেন। দু’দফা বৃষ্টিতে ফুলের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন আবহাওয়া ভাল থাকায় বাগানে আগের চেয়ে বেশি ফুল এসেছে। ফলে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন গোলাম রসুল।
এক বিঘা জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করেছেন মিজানুর রহমান। তার ভাষায়, বিভিন্ন রংয়ের গোলাপ এবার কৃষকের ঘরে ‘বিশেষ উপহার’ হয়ে এসেছে।