চলতি অর্থবছরের ১০ মাস এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে এন-৯৫, কেএন-৯৫, এফএফপি-২, পি-২, ডিএসের মতো বিশেষায়িত মাস্ক রপ্তানি হয়েছে ২৯ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হওয়া আট কোটি ৮২ লাখ ডলারের চেয়ে প্রায় ১৯৫ শতাংশ বেশি। বিশ্বের ৪৯টি দেশে বিশেষায়িত মাস্ক রপ্তানি হলেও এই রপ্তানি পণ্যের প্রধান বাজার মূলত সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই একটি দেশেই মোট মাস্ক রপ্তানির ৯৪ শতাংশের বেশি, যার আর্থিক মূল্য প্রায় ২৭ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় গত ১০ মাসে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে বিশেষায়িত মাস্ক রপ্তানি হয়েছে দুই হাজার ৩৯৫ কোটি টাকার।
তিন স্তরের মেডিক্যাল বা সার্জিক্যাল মাস্ক রপ্তানি যখন তলানিতে ঠেকেছে, ঠিক সে সময় বিশেষায়িত মাস্ক রপ্তানির এমন চমক জাগানিয়া উত্থান স্বস্তি এনেছে এ খাতের উদ্যোক্তাদের মনে।
বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা যায়, এপ্রিল পর্যন্ত চলতি অর্থবছরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ থেকে সর্বমোট ৬৮ কোটি ৮৫ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হওয়া ৪২ কোটি ডলারের চেয়ে ২৬ কোটি ৮০ লাখ ডলার বেশি। চলতি অর্থবছরে এপ্রিল পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২৩ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলারের এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ রপ্তানি পণ্য কাঁচা সবজি রপ্তানি হয়েছে ৯২ লাখ ডলারের। অথচ এই বাজারে বিশেষায়িত মাস্ক রপ্তানি হয়েছে ২৭ কোটি ৩৮ লাখ ডলারের। বাংলাদেশি মুদ্রায় দুই হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ৮৭.৫০ টাকা হিসাবে), যা দেশটিতে বাংলাদেশ থেকে মোট রপ্তানির প্রায় ৪০ শতাংশ। আগের অর্থবছরে এই সময়ে বিশেষায়িত মাস্ক রপ্তানি হয়েছিল তিন কোটি ৭৪ লাখ ডলারের। চলতি অর্থবছরে আরব আমিরাতে মাস্ক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির হার ৬৩১ শতাংশ!
বিশেষায়িত মাস্ক রপ্তানি যেখানে প্রায় তিন গুণ বেড়েছে, ঠিক সে সময় সার্জিক্যাল মাস্ক রপ্তানি কমেছে আশঙ্কাজনকভাবে। এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে এক কোটি ৪৩ লাখ ডলার তথা ১২৫ কোটি টাকার সার্জিক্যাল মাস্ক রপ্তানি হয়েছিল। এর বেশির ভাগ গেছে তুরস্কে (এক কোটি সাত লাখ ডলার)। অথচ চলতি অর্থবছরে এই মাস্ক রপ্তানি নেমেছে মাত্র দুই লাখ ৭০ হাজার ডলারে। এর মধ্যে তুরস্ক এ বছর বাংলাদেশ থেকে কোনো সার্জিক্যাল মাস্ক নেয়নি।
দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুতে অসংখ্য কারখানা আপৎকালীন ব্যবসা হিসেবে যন্ত্রপাতি আমদানি করে মাস্ক উৎপাদন শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত হাতেগোনা দু-একটি ছাড়া আর কেউ টিকে থাকেনি। চাহিদার বিষয়টি মাথায় রেখে চট্টগ্রামের স্মার্ট গ্রুপ করোনার সময়ে আলাদা করে বিশেষায়িত মাস্ক কারখানা চালু করেছে। চট্টগ্রামের অক্সিজেন এলাকায় স্থাপিত অ্যাপারেল প্রমোটারস লিমিটেড নামের দেশের বৃহত্তম মাস্ক তৈরির কারখানায় সার্জিক্যাল মাস্ক ছাড়াও এন-৯৫, কেএন-৯৫ এবং এফএফপি-২-এর মতো সর্বোচ্চ মানের মাস্ক তৈরির পাশাপাশি শু কাভার, হেড কাভার ও গাউনও তৈরি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সনদ নিয়ে ২০২০ সালের জুন-জুলাই থেকে কারখানায় মাস্ক তৈরি হচ্ছে। চট্টগ্রামভিত্তিক মোস্তফা গ্রুপ মাস্ক কারখানা চালু করলেও সেটা এখন বন্ধ রয়েছে বলে বিজিএমইএ সূত্র জানিয়েছে।
বিশ্বব্যাপী বিশেষায়িত মাস্কের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে জানিয়ে অ্যাপারেল প্রমোটারস লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বিশেষায়িত মাস্কের বাজার ভালো রয়েছে। এই মুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্য মাস্কের বড় বাজার। ’
বিজিএমইএর সহসভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘শুধু করোনার জন্য নয়, আগে থেকেই ইউরোপ, আমেরিকা, চীনে মাস্ক ব্যবহারের প্রচলন আছে। তারা ধুলাবালি ও দূষণ এড়াতে মাস্ক ব্যবহার করে। তা ছাড়া ইউরোপ, আমেরিকা, চীন ও রাশিয়ায় আবারও করোনা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। ’ তাই মাস্ক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে অনেকেই হুজুগে মাস্ক তৈরির যন্ত্রপাতি আমদানি করেন। কিন্তু খুব বেশি প্রতিষ্ঠান ব্যবসায় টিকে থাকতে পারেনি। যারা টিকে গেছে, তাদের প্রবৃদ্ধি বেশ চমকপ্রদ। ’