বিলম্বে হজ আদায় প্রসঙ্গে ইসলামের বক্তব্য

মুফতি পিয়ার মাহমুদ

হজ শারীরিক ও আর্থিক ফরজ ইবাদত। হজ আদায়ে সক্ষম ব্যক্তির ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘মানুষের মধ্যে যারা বায়তুল্লাহ পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের ওপর আল্লাহর জন্য এই গৃহের হজ করা ফরজ।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)

হজ সব গুনাহ মুছে দেয়

বিভিন্ন হাদিসে হজের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

যেমন—হজ পূর্ববর্তী সব গুনাহ মুছে দেয়। এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রার (রা.) বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজ করে আর তাতে কোনোরূপ অশ্লীল ও অন্যায় আচরণ করে না, তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (তিরমিজি, হাদিস : ৮১১)

অন্য বর্ণনায় আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য হজ করল এবং অশ্লীল কথাবার্তা ও গুনাহ থেকে বিরত থাকল, সে ওই দিনের মতো নিষ্পাপ হয়ে হজ থেকে ফিরে আসবে, যেদিন মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল। (বুখারি, হাদিস : ১৫২১; মুসলিম, হাদিস : ১৩৫০)

হজের প্রতিদান জান্নাত

হজে মাবরুরের প্রতিদান হলো জান্নাত।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, হজে মাবরুরের প্রতিদান তো জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়। (বুখারি, হাদিস : ১৭৭৩; মুসলিম, হাদিস : ১৩৪৯)
সামর্থ্য থাকার পরও হজ আদায়ে বিলম্ব করা

যার ওপর হজ ফরজ হয়েছে সে যদি মৃত্যুর আগে যেকোনো বছর হজ আদায় করে, তবে তার ফরজ আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু হজের মৌলিক তাৎপর্য, যথার্থ দাবি ও আসল হুকুম হচ্ছে হজ ফরজ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আদায় করা। বিনা ওজরে বিলম্ব না করা।

কারণ যেকোনো সময় যেকোনো ধরনের বিপদ-আপদ, অসুখবিসুখের সম্মুখীন হওয়া বা মৃত্যুর ডাক এসে যাওয়া তো অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘ফরজ হজ আদায়ে তোমরা বিলম্ব কোরো না। কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ২৮৬৭; সুনানে কুবরা বায়হাকি ৪/৩৪০)

একটি হাদিসে কুদসিতে আছে, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি আমার বান্দার শরীরকে সুস্থ রাখলাম, তার রিজিক ও আয়-উপার্জনে প্রশস্ততা দান করলাম। পাঁচ বছর অতিক্রান্ত হওয়ার পরও যদি সে আমার গৃহে হজের উদ্দেশ্যে আগমন না করে তবে সে হতভাগ্য, বঞ্চিত।

’ (ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৩৬৯৫; মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদিস : ১০৩১)

হজ না করার পরিণাম

সামর্থ্য থাকার পরও হজ না করার পরিণাম খুব ভয়াবহ। ফরজ হজ ত্যাগ করলে ইহুদি-নাসারার মতো মৃত্যু হবে বলে হাদিসে সতর্ক করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজ আদায়ে সামর্থ্য থাকার পরও তা আদায় না করে সে ইহুদি হয়ে মৃত্যুবরণ করুক বা খ্রিস্টান হয়ে—তার কোনো পরোয়া নেই।’ (তিরমিজি : হাদিস : ৮১২)

তাই শেষ জীবনের ভরসায় না থেকে হজ ফরজ হওয়া মাত্রই যত দ্রুত সম্ভব তা আদায় করা উচিত।

Comments (0)
Add Comment