বিভিন্ন এলাকায় টিকাকেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়

পাত্তা পায়নি স্বাস্থ্যবিধি

মানুষ গতকাল টিকা নিতে ভোট দেওয়ার মতোই লাইনে দাঁড়িয়েছিল। সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে তৃণমূলের ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকা দেওয়ার বিশেষ কর্মসূচির প্রথম দিনে দেখা গেছে বিপুল আগ্রহ ও উদ্দীপনা। লোকে গমগম করছিল টিকাকেন্দ্রগুলো। তবে উৎসব-আমেজ সময়ের সঙ্গে ফিকে হয়ে আসে টিকা পাওয়াদের তুলনায় না পেয়ে ফিরে যাওয়া লোকের সংখ্যাধিক্যের কারণে। ফিরে যাওয়াদের চোখেমুখে ছিল হতাশা।

অনেক এলাকায়ই বৃষ্টিতে ভিজে দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে যাঁরা টিকা নিতে পেরেছেন তাঁরা যেমন আনন্দ নিয়ে ঘরে ফিরেছেন, তেমনি যাঁরা টিকা না পেয়ে ফিরেছেন তাঁদের মুখে শোনা গেছে কর্তৃপক্ষের নানা পরিকল্পনার ঘাটতি, বিশৃঙ্খলা, হয়রানি ও অনিয়মের কথা। কোথাও নিবন্ধন ছাড়াও অনেকে টিকা পেয়েছেন। আবার অনেকে দীর্ঘদিন আগে নিবন্ধন করে এসএমএস না পেয়েও গতকাল আশা নিয়ে কেন্দ্রে গিয়েছিলেন, কিন্তু তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে নানা অজুহাতে।

অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকায় টিকাকেন্দ্রে মানুষের ভিড়ে  পাত্তা পায়নি স্বাস্থ্যবিধি। অনেকে মাস্ক না পরেই এসেছিলেন টিকা দিতে। অনেক এলাকায় স্থানীয় প্রভাবশালীরা আগেই নিজেদের পছন্দের লোকজনের নিবন্ধন করে রেখেছিলেন। এর পাশাপাশি বিচ্ছিন্ন কিছু সুযোগে সরাইল ও খুলনা নগরীতে দুজনকে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে একাধিক ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। একটি এলাকায় একজন সংসদ সদস্য নিজেই টিকা পুশ করেন বলে তথ্য এসেছে গণমাধ্যমে।

এই টিকাদান কার্যক্রমে সরকারের স্বাস্থ্যকর্মীসহ বিভিন্ন বেসরকারি পর্যায়ের স্বেচ্ছাসেবীরা যেমন কাজ করেছেন, তেমনই স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় বিভিন্ন কমিটির নেতাকর্মীরাও সহায়তা করেছেন। যদিও কোথাও কোথাও এমন সহায়তার আড়ালে প্রভাব খাটানোরও অভিযোগ উঠেছে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় আগে থেকেই চলমান শহর এলাকার নিয়মিত টিকাদান কার্যক্রমের পাশাপাশি ছয় দিনব্যাপী এই বিশেষ টিকাদান কর্মসূচির  আওতায় গতকাল সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়। ২৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠী, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠী, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধী এবং দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আনার ঘোষণা দেওয়া হয়। ১০ থেকে ১২ আগস্ট বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমারের জনগোষ্ঠীর ৫৫ ও তদূর্ধ্ব মানুষের মধ্যে টিকাদান কার্যক্রম পরিচালিত হবে।

ঢাকায় গতকাল এই বিশেষ টিকাদান ক্যাম্পেইনের আওতায় অন্যান্য সরকারি কেন্দ্রের পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ১৩৩টি কেন্দ্রে শুরু হয়েছে কভিড-১৯-এর গণটিকা কার্যক্রম।

ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জোবায়দুর রহমান বলেন, ‘এটা খুব ভালো বিষয় যে মানুষ টিকা নেওয়ার জন্য এতটা সাড়া দিচ্ছে। এটা একটি ইতিবাচক দিক। আজ (গতকাল) যারা টিকা পায়নি আমরা তাদের আশ্বস্ত করছি কাল, পরশু বা আগামী সপ্তাহে তাদের টিকা দেওয়া হবে।’

হাজারীবাগ ও লালবাগ এলাকার ২২, ২৪ ও ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন গণটিকাদানকেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, কেন্দ্রগুলোতে ভোটের মতোই বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়তে থাকে। বিভিন্ন কেন্দ্রে পুলিশ মাইকিং করেও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পারেনি। আবার দুপুরের পর থেকে টিকা না পাওয়ার আশঙ্কায় হৈচৈ হতেও দেখা যায়। সব কেন্দ্রেই নির্ধারিত টিকার তুলনায় কয়েক গুণ টিকাপ্রত্যাশী উপস্থিত ছিলেন।

রাজধানীর তেজগাঁও আদর্শ স্কুল অ্যান্ড কলেজের কেন্দ্রে টিকার সরবরাহ ছিল মাত্র ৩৫০টি। ফলে অপেক্ষা করেও বহু মানুষকে টিকা না নিয়ে ফিরে যেতে হয়েছে; যদিও কেন্দ্র থেকে তাঁদের বলা হয়েছে আজ আবার যেতে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ২৭ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বকশীবাজার নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র-৫-এ দায়িত্বরত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানান, সকাল থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ১৫০ জনের রেজিস্ট্রেশন করানো হয়েছে। যাঁদের সব কাগজপত্র ঠিক আছে এবং শারীরিক কোনো অসুস্থতা নেই তাঁদের এখন টিকা দেওয়া হচ্ছে।

Comments (0)
Add Comment