রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিএনপি। এই মুহূর্তে দলটির সব মনোযোগ জাতীয় নির্বাচনের ওপর। দলটির নেতার মনে করছেন, অতি প্রয়োজনীয় ন্যূনতম সংস্কার শেষ করে যত দ্রুত সম্ভব দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন। এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপেও রাখতে চায় তারা। দলটি জাতীয় নির্বাচনকে প্রাধান্য দিয়েই পরবর্তী সাংগঠনিক কর্মসূচি তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পবিত্র রমজান ও ঈদুল ফিতরের পরপরই নির্বাচনকেন্দ্রিক এ কর্মসূচি ও তৎপরতা শুরু হবে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল, সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ নির্বাচনের জন্য নেতাকর্মীরা লড়াই সংগ্রাম করছে। স্বৈরাচারের বিদায় হয়েছে এখন যত দ্রুত নির্বাচন দেওয়া যাবে ততোই মঙ্গল।
অন্তর্বর্তী সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রস্তুত, কিন্তু নির্বাচনে জন্য এখনো কোনো প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি, তবে এটা কোনো সমস্যা নয় বলে মনে করেন দলের নেতারা।
জানা গেছে, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সক্রিয় প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূল নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থেকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানানো হয়।
গত ৫ আগস্টের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৃণমূল এবং কেন্দ্রের সাড়ে তিন হাজার নেতার উপস্থিতিতে উৎসবের আমেজে বড় মিলনমেলায় পরিণত হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল প্রাঙ্গণে দিনব্যাপী বিএনপির এই বর্ধিত সভা। আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির জন্য বর্ধিত সভা গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে অভিমত নেতাদের।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলের নেতাদের নির্বাচনী বার্তা দিয়েছেন বিএনপির হাইকমান্ড। বর্ধিত সভা থেকে নির্বাচনের জন্য ‘বিএনপিকে প্রস্তুত করতে’ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই সঙ্গে নেতাদের সতর্ক করে তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের মাঠ কঠিন হতে পারে। সেক্ষেত্রে নেতাকর্মীদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে জনগণের পাশে থেকে ঐক্যবদ্ধভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। তৃণমূলের নেতারাও নির্বাচন সামনে রেখে দলের যে কোন্দল-গ্রুপিং আছে, তা মিটিয়ে ফেলার সুপারিশ করেছেন। এ ছাড়া ত্যাগী নেতাদের যাতে মূল্যায়ন করা হয়, সে ব্যাপারে তারা জোর দিয়েছেন।
সূত্র জানায়, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বিএনপি ২২০ থেকে ২২৫টি আসনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দিতে পারে। বাকি আসনগুলো বরাদ্দ রাখা হতে পারে জোটে বা যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সমমনা দলগুলোর জন্য। সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে ২০ ভাগ নতুন মুখ এবং ৮০ ভাগ পুরানো মুখ সবুজ সংকেত পেতে পারেন। এক্ষেত্রে ৫ ভাগ আমলা, ৩০ ভাগ ব্যবসায়ী এবং বাকি ৬৫ ভাগ থাকতে পারেন রাজনীতিবিদ।
জানা গেছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য এখনো কোনো প্রার্থী ঠিক করেনি বিএনপি। তবে নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা করার পরই প্রার্থীদের তালিকা প্রস্তুত করবে দলটি। প্রতিটি সংসদীয় আসনে একাধিক প্রার্থী রাখা হবে। অতীতের আন্দোলন সংগ্রাম জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন এমন নেতারাই বেশি প্রাধান্য পাবেন। আগামী নির্বাচনে খুব সহজ হবে না বলে মনে করে বিএনপির হাইকমান্ড। তাই দলের মধ্যে কোন্দল গ্রুপিং মেটাতে কাজ করছে দলটি।
নির্বাচনের জন্য বিএনপি কতটা প্রস্তুত জানতে চাইলে দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রস্তুত রয়েছে। বিগত ১৬ বছর ধরেই বিএনপি প্রস্তুত। আমরাতো জুনের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়ার জন্য বলেছি। সেটার জন্যও বিএনপি প্রস্তুত। দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। যখনই নির্বাচন দেওয়া হবে তাতে কোনো সমস্যা নেই।
নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন যখনই হোক না কেন প্রার্থী কোনো সমস্যা নয়।
নির্বাচনের জন্য বিএনপি কতটা প্রস্তুত জানতে চাইলে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, বিএনপি ২০ বছর ধরে নির্বাচন নির্বাচন করে আসছে। আর এই নির্বাচনের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করেছে, জেল জুলুমের শিকার হয়েছে। এখন স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
নির্বাচনের জন্য বিএনপি প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি, এটা হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এটুকু বলতে পারি যারা বিগত আন্দোলন সংগ্রামে ভূমিকা রেখেছেন, হামলা, মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তারাই আগামী নির্বাচনের জন্য মনোনীত হবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান বলেন, বিএনপি সব সময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন হলেও প্রস্তুত জুনের মধ্যে হলেও বিএনপি প্রস্তুত।
বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রাথমিক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি বিএনপি। যখন চূড়ান্ত হবে তখন জানতে পারবেন।