পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন সোমবার বিকেলে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঢাকার বায়ু ও শব্দ দূষণ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার শুরুতে বলেন, ঢাকাসহ দেশের বাতাসে দূষণ প্রতিদিনই বাড়ছে। বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরে তালিকার শুরুর দিকে রয়েছে রাজধানী ঢাকা। দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধুলাবালি। নগরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এই ধুলাই হয়ে উঠেছে রাজধানীবাসীর নিত্যসঙ্গী।
তিনি আরও বলেন, এটা সংকটাপন্ন অবস্থা। আর বায়ুদূষণের পেছনে ৫৮ শতাংশই দায়ী ইটভাটা। নির্মাণকাজ, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও আবর্জনা পোড়ানো দূষণের অন্যতম কারণ। এখন থেকে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে সরকারের যেকোনো উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ম্লান হয়ে যাবে। তবে বায়ুদূষণের বিষয়ে মানুষের সচেতনতাও জরুরি।
শাহাব উদ্দিন জানান, বাংলাদেশে বায়ু দূষণের উৎস নিয়ে চলতি বছরের মার্চে একটি গবেষণা প্রকাশ করেছে পরিবেশ অধিদফতর ও বিশ্বব্যাংক। তাতে দেখা যায়, দেশে বায়ু দূষণের প্রধান তিনটি উৎস হচ্ছে- ইটভাটা, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও নির্মাণকাজ। আট বছর ধরে এ তিন উৎস ক্রমেই বাড়ছে।
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার, পরিবেশসচিব আবদুল্লাহ মোহসীন চৌধুরী, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক রফিক আহমেদসহ অন্যরা।
মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরের ৪০টি স্থানে রাতে বর্জ্য পোড়ানো হয়। এটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। বাতাস দূষিত হওয়ার অন্যতম কারণ এই বর্জ্য পোড়ানো। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন এখন থেকে রাতের বেলায় আর বর্জ্য পোড়াতে পারবে না।
উল্লেখ্য গতকালের আন্ত মন্ত্রণালয় সভায় সাতজন মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও তাঁদের একজনও উপস্থিত ছিলেন না। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রও আমন্ত্রণ রক্ষা করেননি। এ ছাড়া বায়ু ও শব্দ দূষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত সাতটি মন্ত্রণালয়ের সচিবদেরও সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁরাও কেউ আসেননি। সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তারা যোগ দেন।
বিকেল ৩টা থেকে শুরু হয়ে আড়াই ঘণ্টাব্যাপী চলা সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিবেশমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি। অবৈধভাবে পরিচালিত ইটভাটাগুলো বন্ধে অভিযান কার্যক্রম জোরালো করা হবে। ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন বর্তমানে রাস্তাঘাটে পানি ছিটিয়ে দায়িত্ব শেষ করে। এতে বায়ুদূষণ রোধ হয় না। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঝরনার মতো ওপর থেকে পানি ঢালতে হবে। এ জন্য তারা প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ ও কার্যক্রম গ্রহণ করবে। মেট্রো রেল প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সকাল-বিকাল পানি ছিটাতে হবে। দুই সিটি করপোরেশন এখন থেকে আর রাতে ময়লা-আবর্জনা পোড়াবে না। ঢাকায় যেসব অবকাঠামো নির্মাণ কাজ চলছে, সেখানে নির্মাণসামগ্রী ঢেকে রাখা বাধ্যতামূলক।’
মন্ত্রী জানান, এক মাস পর আবার বৈঠকে বসে সিদ্ধান্তগুলো কার্যকর করা হচ্ছে কি না তা দেখা হবে। কার্যকর না হলে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়াও প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের চারপাশের সড়ক আগামী ১৭ ডিসেম্বর থেকে শব্দদূষণমুক্ত ঘোষণা করা হবে। ওই দিন থেকে সচিবালয়ের চারপাশ ‘নীরব জোন’ ঘোষণা করবে সরকার। এর আগে যানবাহনের চালকদের মধ্যে সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হবে।