ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলার ফলে গত ১৫ মাসে গাজার প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। যুদ্ধবিরতির পর অনেকেই তাদের বাড়িতে ফিরেছেন, কিন্তু পুরো গাজা উপত্যকায় বলতে গেলে কিছুই অক্ষত নেই। ইসরায়েলি বোমায় বেশিরভাগ স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই বাড়ি ফিরলেও মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলছে না গাজাবাসীর। তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা ও রয়টার্সের।
ইউনাইটেড নেশনস স্যাটেলাইট সেন্টার (ইউএনওএসএটি) জানিয়েছে, গাজার প্রাক-যুদ্ধ কাঠামোর দুই-তৃতীয়াংশ, ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে, যা ভূখণ্ডের পুরো কাঠামোর প্রায় ৭০ শতাংশ।
প্রিয়জনের খোঁজ: এদিকে, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের পরেই গাজার সাধারণ মানুষ তাদের প্রিয়জনদের অবশিষ্টাংশ খুঁজছেন। পরিবারের কেউ নিখোঁজ থাকলে তাদের খুঁজে পাওয়ার শেষ চেষ্টা করছেন তারা। কিন্তু ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে উদ্ধার করা মৃতদেহের অংশবিশেষ এবং চিহ্নহীন অবস্থা তাদের বেদনাকে আরও গভীর ও তীব্র করছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের মর্গে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখা গেছে। প্রিয়জনদের সন্ধানে আসা পরিবারগুলো প্রিয়জনের লাশ শনাক্ত করার জন্য কাপড় বা ব্যক্তিগত জিনিসপত্রের মতো ছোটখাটো চিহ্ন খুঁজছেন।
গাজার মানুষ আজ তাদের প্রিয়জনদের শেষ স্মৃতিটুকু ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। এক টুকরো হাড় বা একটি জুতা তাদের কাছে পুরো একটি জীবনের স্মৃতি। কিন্তু ডিএনএ পরীক্ষার অভাব এবং সীমিত ফরেনসিক সুবিধার কারণে অনেক পরিবার চূড়ান্ত উত্তর পাওয়ার আশায় থেকেও তা পান না। আন্তর্জাতিক সহায়তার অভাবে এই সংকট আরও দীর্ঘতর হচ্ছে। যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ শুধুমাত্র জীবনহানি নয়, অগণিত পরিবারকে চিরদিনের জন্য বেদনায় রেখে যাচ্ছে।
নিজ বাড়ির ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন মুরাদ মুকদাদ। ছবি: সংগৃহীত
অবকাঠামো এবং হাসপাতাল: সংঘাতে গাজার অবকাঠামোগত ক্ষতির মাত্রা ব্যাপক। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গাজার ৬৯ দশমিক আট শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েল বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শহুরে এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছে এবং কিছু অবকাঠামোয় একাধিকবার হামলা চালানো হয়েছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার প্রায় সব হাসপাতাল বন্ধ গেছে। বাকি হাসপাতালগুলোয় আংশিকভাবে কাজ চলছে। হাসপাতালগুলো খোলা থাকলেও কিন্তু তারা দীর্ঘস্থায়ী রোগ এবং জটিল আঘাতের কোনো চিকিৎসা দিতে পারছে না। কারণ সংঘাতে অন্তত এক হাজার ৬০ জন চিকিৎসাকর্মী নিহত হয়েছেন।
শিক্ষার ক্ষয়ক্ষতি: গাজার শিক্ষার খাতেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আইডিএফ জানায়, তারা জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে ৪৯টি স্কুল ভবনে হামলা চালিয়েছে। স্কুল ভবনে হামলায় যে ক্ষতি হয়েছে তা গাজায় শিক্ষা স্বাভাবিক করতে চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করবে।
বিবিসি দেখিয়েছে ইসরায়েল তাদের সামরিক অভিযান শুরুর পর পর কীভাবে শত শত পানির লাইন এবং স্যানিটেশন সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস করে দিয়েছে।
অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ অর্থাৎ মানুষের বাড়িঘর থেকে শুরু করে জনসেবা কেন্দ্র পুনরায় নির্মাণ করাই হবে সামনের বছরগুলোয় একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।