আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কার্যক্রম শুরু করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) নির্বাচন কমিশন (ইসি) কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেছেন, আমরা আশা করছি যে পঁচিশ সালের জানুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে এ কার্যক্রম শুরু করতে পারবো। ইতোমধ্যে আমরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। ৫ জানুয়ারির মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করতে পারবো। যারা এ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে তারা মাঠের যে জনবল বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে তারা কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করবে সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবে।
অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, আগামী বছরের ২ জানুয়ারি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করার পরে তা আমরা জনগণকে দেখানোর জন্য উন্মুক্ত করে দেব। জনগণ এটা দেখার সুযোগ পাবেন। সেখান থেকে যদি কেউ বাদ পরে থাকে তাহলে তাদেরকে দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির একটা ব্যবস্থা করা হবে। দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তির পর ২ মার্চ যে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে সেখানে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এ কাজ আমরা প্রতি বছরই করে থাকি। এটাকে আমরা চব্বিশের হালনাগাদ ও পঁচিশের ভোটার তালিকা হিসেবে গণ্য করবো।
হালনাগাদের কথা জানিয়ে কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, তালিকায় যদি কেউ বাদ পরে থাকে একইসঙ্গে আমরা আগাম আরও এক বছরে তথ্য বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করবো। আমরা শুধু মাত্র পঁচিশ সালের তথ্য সংগ্রহ করবো না। একইসঙ্গে ছাব্বিশ সালের পহেলা জানুয়ারিতে যাদের বয়স ১৮ হবে তাদের তথ্যও সংগ্রহ করবো। তাদের আমরা ২০২৬ সালের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করবো। তবে তারা পঁচিশ সালের কোনো নির্বাচনে ভোটার হিসেবে গণ্য হবে না।
ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলমান হালনাগাদ কার্যক্রমের মধ্যেও আগাম এক বছরের তথ্য নেওয়া হতে পারে বাড়ি বাড়ি গিয়ে, যা গত দুই বছর হয়নি। বর্তমানে প্রশিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে, যা ৫ জানুয়ারি শেষ হবে। এরপর তারা তথ্য সংগ্রহকারীদের প্রশিক্ষণ দেবে৷ এসব প্রক্রিয়া শেষে আগামী ২০ জানুয়ারি থেকে বাড়িবাড়ি যাবে যাবে ইসি।
২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের তথ্যই সংগ্রহ করা হবে। এভাবে তথ্য নেওয়ার পর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে ২০২৬ সালের ২ জানুয়ারি। আর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে একই বছর ২ মার্চ।
সর্বশেষ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছে ২০২২ সালে। সে সময় ২০২৩, ২০২৪ ও ২০২৫ সালের তথ্য একসঙ্গে নেওয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে যারা ১৮ বছর পূর্ণ করেছেন তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে তাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে আগামী ২ জানুয়ারি।
সব নাগরিকদের আহ্বান জানিয়ে অতিরিক্ত সচিব বলেন, তথ্য সংগ্রহকারীরা যখন বাড়ি বাড়ি যাবে তখন তাদের সঠিক তথ্য দিয়ে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য সহযোগিতা এবং মৃত ভোটারের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, প্রতি বছর ১ জানুয়ারি অনুযায়ী হালনাগাদ ভোটার তালিকা হয়ে থাকে। এ পর্যন্ত ১৭ লাখ তথ্য আমাদের হাতে আছে, যেটা ২ জানুয়ারি ২০২৫ সালে আমরা সন্নিবেশ করব এবং তারা নতুন ভোটার হিসেবে তালিকায় যুক্ত হবেন। তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে দেখা গেছে এই তথ্যটা পূর্ণাঙ্গ হয় না। কারণ, অনেকেই অফিসে এসে নিবন্ধন সম্পন্ন করেন না। আনুমানিক ৪৫ লাখ হতে পারতো এই সংখ্যাটা। আমাদের হাতে যে ১৭ লাখ তথ্য আছে তার মধ্যে ১৩ লাখ আমরা ২০২২ সালে সংগ্রহ করেছিলাম। আর বাকি চার লাখ আমাদের বিভিন্ন অফিসে এসে এই বছরে নিবন্ধন করেছে৷ অর্থাৎ আমাদের ধারণা ২৭ থেকে ২৮ লাখ ভোটার, কম-বেশি হতে পারে, যারা কিন্তু ভোটার হওয়ার যোগ্য।
সর্বশেষ হালনাগাদ অনুযায়ী, দেশে ভোটার রয়েছে ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন।