বারুদের গন্ধে ফুলের সৌরভ, গাজায় যুদ্ধের মধ্যেই বিয়ে!

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধের মধ্যে স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন এক তরুণী। ১৭ বছর বয়সী আফনান জিব্রিলের বর মুস্তাফা শামলাখের বয়স ২৬। বিয়ের দিন পরিবারের সদস্য ও বন্ধুরা আফনানকে ঘিরে হাততালি দিচ্ছিল এবং উল্লাশ করছিল। ধ্বংসযজ্ঞের মধ্যেও এদিন তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।

আফনানের বাবা মোহাম্মদ জিব্রিল বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমরা এমন মানুষ, যারা মৃত্যু, হত্যা এবং ধ্বংস সত্ত্বেও জীবনকে ভালোবাসি’

মিসরের সীমান্তের কাছে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে একটি পরিত্যক্ত স্কুল ভবনের ছোট ঘরে যুদ্ধকালীন এ বিয়ের জন্য গতকাল দুই পক্ষের আত্মীয়রা জড়ো হয়েছিল। শহরটির বুকে প্রতিদিন ইসরায়েলি বোমা এসে পড়ছে।

বর ও কনের পরিবারের অনেকেই যুদ্ধ শুরু হলে ওই অঞ্চলের আরো উত্তরে পালিয়ে গেছে। চলমান যুদ্ধের মধ্যে বর ও কনে—উভয়ের পরিবারই অনুভব করেছিল, এ অবস্থায় বিয়ের জন্য অপেক্ষা করে লাভ হবে না।

তাই তারা বিয়েতে রাজি হয়েছিল।

কনের বাবা বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে বিয়ের জন্য স্বাভাবিক প্রস্তুতি সম্ভব নয় এবং ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানগুলো কার্যকর (আয়োজন) নয়। তবে কাপড় পাওয়া যায়, যদিও সেগুলো (এখন) দুষ্প্রাপ্য ও ব্যয়বহুল।

এএফপি জানিয়েছে, এদিন কনে আফনান ফুলের মুকুট এবং গাঢ় লাল সূচিকর্ম করা সাদা পোশাক পরেছিল। বর মুস্তাফাও উদযাপনের বিরল সুযোগটি ব্যবহার করতে চেয়েছেন। অতিথিরা ঘরের চারপাশে সাদা ক্রিম স্প্রে করার সঙ্গে সঙ্গে তারা হাসতে শুরু করে এবং নেচে ওঠে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তাদের বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়।

৭ অক্টোবর ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস একটি নজিরবিহীন হামলা চালালে এ যুদ্ধ শুরু হয়।

ইসরায়েলি সরকারের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপির তথ্য অনুযায়ী, ওই হামলার প্রায় এক হাজার ১৪০ জন নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক। অন্যদিকে হামাস শাসিত অঞ্চলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলের নিরলস সামরিক অভিযানে গাজায় কমপক্ষে ২৩ হাজার ৮৪৩ জন নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া জাতিসংঘের অনুমান, এ যুদ্ধে প্রায় ২০ লাখ ফিলিস্তিনের বাসিন্দা বাস্তচ্যুত হয়েছে।

ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডটি ইসরায়েলি হামলার কারণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বরের চাচা আয়মান শামলাখ এএফপিকে বলেন, ‘বর যে বাড়িতে থাকার কথা ছিল সেটি ধ্বংস হয়ে গেছে।’

স্কুলে উদযাপনের পর এই দম্পতি একটি তাঁবুতে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের দিকে রওনা হন। তারা অপেক্ষারত একটি কালো গাড়িতে করে রওনা দেন। এ সময় শুভাকাঙ্ক্ষীদের একটি বিশাল ভিড় গাড়িটিকে ঘিরে রেখেছিল, যা প্রায় অন্য বিয়ের দিনের মতো দেখাচ্ছিল।

আয়মান শামলাখ বলেন, ‘আমরা সবাই একই ট্র্যাজেডির মধ্য দিয়ে বসবাস করছি। তবে, আমাদের অবশ্যই বেঁচে থাকতে হবে এবং জীবনকেও চলতে হবে।’

Comments (0)
Add Comment