সাড়ে তিন বছর বয়সে ‘লিনজা’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন জিনাত সানু স্বাগতা। এরপর শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন ‘সম্মান’, ‘সতীপুত্র আবদুল্লাহ’ ও ‘টপ মাস্তান’ চলচ্চিত্রে। স্বাগতা ছোটবেলা থেকে গান গাইতেন। নতুনকুঁড়ি প্রতিযোগিতায় ছড়াগান বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলেন তিনি।
২০০৬ সালে মান্নার বিপরীতে শত্রু শত্রু খেলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো কোনো চলচ্চিত্রে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এর আগে, ২০০৫ সালে ‘ইউ গট দ্য লুক’ প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছিলেন তিনি। তার সমসাময়িক ব্যস্ততা ও ব্যক্তিগত ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন আরটিভি নিউজের সঙ্গে। স্বাগতার সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতাঃ
কী নিয়ে ব্যস্ততা?
স্বাগতা : এখন যেসব কাজ নিয়ে ব্যস্ত তার ভেতর সবচেয়ে এক্সাইটিং হচ্ছে চলচ্চিত্র। স্বাধীনতার ৫০ বছর উপলক্ষে আমার একটি চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছে। ‘লাল মোরগের ঝুটি’ সিনেমাটি বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছরে মুক্তি পাওয়ায় আমার জন্য অত্যন্ত আনন্দের সংবাদ ছিল। আমার মনে হয় আমার দর্শকদেরও ভালো লেগেছে চলচ্চিত্রটি। অনেক বড় বড় অভিনেতারা সিনেমাটিতে অভিনয় করছেন। এ ছাড়াও এখন আমি ব্যস্ত ওয়েব সিরিজ নিয়ে। জি-ফাইভের জন্য ওয়েব সিরিজ করেছি। হাতে আরও কিছু সিরিজ রয়েছে। পাশাপাশি সিঙ্গেল নাটকের শুটিং তো আছেই। উপস্থাপনাও করছি বাংলাদেশ বেতারে একটি প্রোগ্রাম। আর আশা করি, আপনাদের সামনে গান নিয়ে হাজির হব।
দীর্ঘদিন ধরে মিডিয়ায় কাজ করছেন, বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
স্বাগতা : বিষয়টিকে আমি পজিটিভলি দেখছি। আসলে যেকোনো একটা জাগায় বসবাস অনেক বছর না করলে সেটাকে নিজস্ব মনে হয় না। আমার মনে হচ্ছে আমি যত বছর মিডিয়ায় কাজ করছি তত বেশি আমার এই জায়গার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হচ্ছে এবং আমার কাজের প্রতি কমিটমেন্ট তৈরি হচ্ছে। তো এটাকে আমি খুবি পজিটিভভাবে দেখি। দোয়া করবেন আমি যেন মৃত্যু পর্যন্ত আপনাদের বিনোদনের সঙ্গে থাকতে পারি।
ওয়েব ফ্লিম কিংবা সিরিজে আপনি বেশ নিয়মিত এখন। অভিনয়ের জায়গা কতটুকু পাচ্ছেন?
স্বাগতা : এখন থেকে রেগুলার ওয়েব সিরিজে কাজ করতে চাই। কারণে কাজটা সুন্দর হওয়ার জন্য বাজেটের প্রয়োজন যেটা আসলে ওয়েব সিরিজে ঠিকঠাক পাওয়া যায়। এই কারণে টেলিভিশন আপাতত কিছুটা পিছিয়ে। যেহেতু আমাকে পারফর্মই করতে হবে এবং আমার দর্শকদের রিচ করতে হবে তো আমার মনে হয় ওয়েব সিরিজ একটা ভালো মাধ্যম। আর কেমন চরিত্র পাচ্ছি- আমার মনে হয় যে ওয়েবে কাজ করার জন্য যে ধরনের কাজ হওয়া দরকার সেটি বুঝতে আমাদের কিছুদিন সময় লাগবে, সময় লাগছে। এ কারণে প্রচুর এক্সপ্রিমেন্টাল কাজ হচ্ছে। তাই ভক্তরা দেখতে থাকবেন, আমাদেরকে ফিডব্যাক দেবেন। তারপর আসলে আমাদের কী ধরনের কাজ করা দরকার, বুঝতে পারব। তবে চরিত্র আমি পাচ্ছি। ভালো ভালো চরিত্র পেলে পারফর্ম করতে ভালো লাগে।
ওয়েবে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন?
স্বাগতা : ফ্লিম বলেন, বিজ্ঞাপন বলেন, নাটক বলেন বা ওয়েব সিরিজ বলেন যেটাতেই বলেন না কেন এক একটা এক এক রকমের ফর্মে শুটিং হয়। পারফর্ম্যান্স করতে হয় এক এক ফর্মে। এই ভিন্ন ভিন্ন ফর্মেটে অভিনয় করতে পারাও এক ধরনের মজা আছে। ওয়েব সিরিজ আসলে অন্য একটা ল্যাংগোয়েজ। যেটাকে আমরা বলব যে ‘ওয়েব সিরিজ নট অ্যা নাটক, ওয়েব সিরিজ নট অ্যা ফ্লিম। ইট’স অ্যা সিরিজ।’ এই সিরিজটাকে আমরা আসলে রেগুলার টেলিভিশন সিরিজও বলতে পারছি না। তো এই ক্ষেত্রে ভিন্ন রকম অভিনয় করার চেষ্টা করেছি। দেখা যাক দর্শকের কেমন লাগে।
ব্যক্তিগত জীবন কেমন যাচ্ছে?
স্বাগতা : ব্যক্তিগত জীবনে যেমন সবার চড়াই-উৎরায় থাকে আমারও সেই রকম। আমি খুব সাধারণ মানুষ। আর যেটা বলব- কোভিডের কারণে আমরা সবাই সবার জীবনের প্রতিটা কাজে পিছিয়ে গিয়েছি। আমিও তাদের থেকে আলাদা নই। সবাই যেভাবে তাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে আমি সেভাবে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। দোয়া করবেন।
দিনশেষে নিজেকে কতটুকু সময় দিতে পারেন?
স্বাগতা : ২০০৫ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত আমি তেমন একটা সময় দিতে পারিনি। এ সময় আমি যে কজাগুলো করেছিলাম সেগুলো দর্শকদের কাছে প্রোভাইড করা। ২০১৫ পরে আমার একটা ব্রেক পড়ল। সেই ব্রেকটা আমার আসলে জীবনের নানা ব্যস্ততা থাকার কারণে আমি আমার পারর্মেন্সকে সময় দিতে পারিনি। তবে কোভিডের সময়ে নিজেকে সময় দিতে পেরেছি। আমার মনে হয় এই ব্রেকটা আমার জীবনে প্রয়োজন ছিল। একনাগাড়ে কাজ করে গেলে কাজগুলো একঘেয়েমি হয়ে যায়। আমার আসলে কোথায় কোথায় নিজেকে পরিবর্তন করা লাগবে বা আসলে পৃথিবী কোথায় পৌঁছে গেছে, এগুলো আমি রিসার্স করতে পেরেছি বা আমি জানতে পেরেছি।
নিজেকে ব্যাখ্যা করবেন কীভাবে?
স্বাগতা : নিজেকে ব্যাখ্যা কীভাবে করব, সেটার ভাষা আমার জানা নেই। কারণ, কাজের শুরু থেকেই আপনারা আমাকে ব্যাখ্যা করেছেন সেই ব্যাখ্যাতেই আমি মুগ্ধ ছিলাম। আর বিভিন্ন চরিত্রে আমাকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করা হয় তো এটা আমার জন্য এক্সাইটিং ব্যাপার। তবে আপনি যদি জানতে চান ‘আমি আসলে নিজেকে কী মনে করি? আমার মনে হয় আমার পারফর্মিং। এই পারফর্মিং আমার রিয়েল লাইফেও করতে হয় আবার পর্দার সামনে করতে হয়। আই অ্যাম সো লাকি যে আমার শুধু আমার নিজের জীবনের পারফর্মিং করতে হয় না, পর্দাতেও পারফর্ম করতে হয়। তো এইটাই আমার জন্য অনেক বড় পাপ্তি যে আমার অভিনয়টা।
অভিনয়ের বাইরে সবচেয়ে বেশি কী মনে পড়ে?
স্বাগতা : অভিনয়ের বাইরেই বলেন আর ভেতরেই বলেন সবচেয়ে যা মনে করি সেটা হচ্ছে আমার বাবাকে। কারণ, তাকে আসলে আমার আর দেখার উপায় নেই। আমি প্রতিটা কাজের পরে তাকে মিস করি। প্রতিটা কাজ পাওয়ার পরেও আমি তাকে মিস করি। কারণ, তিনি আমার অনেক বড় বন্ধু ছিলেন। আমার ক্যারিয়ার আমি কী কী কাজ করব, কোনটা আমার জন্য ভারো হবে তার সঙ্গে আমি আলোচনা করতাম। আমার কোন কাজ ভালো হলে আমাকে এপ্রিশিয়েট করতেন। খুবি কষ্টে অ্যাপ্রশিয়েট করত, বেশির ভাগ সময় অ্যাপ্রিশিয়েট করতে চাইতেন নাহ। যাতে আমি মাথায় উঠে না যাই। তার এই এটিটিউট গুলো আমি খুব মিস করি। কারণ, আমার বেস্ট ফ্রেন্ড আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আর যেটা মিস করি আমার সে চলে যাওয়ার পর আমার কাজের প্রতি আগ্রহ কমে গিয়েছিল তো আমার সেই আগ্রহটা মিস করি। আশা করি আমার সেই আগ্রহটি ফিরে আসবে। আমি আপনাদের সামনে আগের মত ফিরে আসব।