বাতজ্বর বললে আমরা রোগটিকে শুধু বাত বা অস্থিসন্ধির সমস্যা মনে করে থাকি। বাতজ্বরের আসল সমস্যা হলো, তা অনেক ক্ষেত্রে হার্টকেও আক্রান্ত করতে পারে। তবে বাতজ্বরে হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হওয়ার পরও বেশির ভাগ রোগী চিকিৎসার পর সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যায়। স্বল্পসংখ্যক রোগীর হৃদযন্ত্রের ভালভের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। এ অবস্থাকেই বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ বলে। যারা বারবার বাতজ্বরে আক্রান্ত হন, তাদের বাতজ্বরজনিত ভালভের রোগ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। ফলে রোগীর শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় ও কাশি হতে পারে এবং পানি জমার কারণে পায়ের পাতা ফুলে যেতে পারে। রোগী অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে, কর্মক্ষমতা কমে যায়, এমনকি অকালে মৃত্যুও হতে পারে।
সম্ভাব্য বাতজ্বরে আক্রান্ত রোগীর সুনির্দিষ্ট কিছু রক্ত পরীক্ষা ও অন্যান্য পরীক্ষার সঙ্গে রোগের কিছু উপসর্গ একত্র করে তবেই রোগটিকে বাতজ্বর বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। রোগ চিহ্নিত করার এ বিশেষ পদ্ধতিকে বলা হয় জোনস ক্রাইটেরিয়া। জোনস ক্রাইটেরিয়ার গৌণ শর্তের মধ্যে রয়েছে জ্বর, শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্যথা, রক্তের ইএসআর বা সিআরপি এবং ইসিজিতে হার্টের সমস্যা চিহ্নিতকরণ। মুখ্য ক্রাইটেরিয়া হলো এক বা একাধিক গিঁটে ব্যথা, হার্টের সমস্যা, স্নায়বিক সমস্যা, ত্বক ও হাড়ের সন্ধিস্থলে দৃশ্যমান নোডিউল এবং ত্বকে লাল গোটা। বাতজ্বর হলে অবশ্যই জোনস ক্রাইটেরিয়ার শর্ত পূরণ করতে হবে।
বাতজ্বরের চিকিৎসা
পেনিসিলিন ও অ্যাসপিরিন দিয়ে এর চিকিৎসা করা যায়। হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। প্রথম দিকে রোগীকে যথেষ্ট বিশ্রাম নিতে হয়। রোগের তীব্রতা কমা পর্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে।
বাতজ্বর থেকে বাঁচার উপায়
বাতজ্বরের আক্রমণের সংখ্যা যত বাড়বে, বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ হওয়ার আশঙ্কা তত বেশি হবে। তাই যারা বাতজ্বরে আক্রান্ত হয়েছে বা বাতজ্বরজনিত হৃদরোগে ভুগছে, তাদের তিন সপ্তাহ পরপর একটি বেনজাথিন পেনিসিলিন ইনজেকশন নিতে হবে অথবা দিনে দু’বার পেনিসিলিন ট্যাবলেট সেবন করতে হবে। এ ব্যবস্থা দীর্ঘমেয়াদি। মোট পাঁচ বছর, অর্থাৎ ২২ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত নিতে হবে। এর মধ্যে যেটি দীর্ঘতর হবে, সেটিই প্রযোজ্য হবে। যেমন– যার বয়স ২০, তাকে নিতে হবে পাঁচ বছর; যার বয়স ১০, তাকে নিতে হবে ১২ বছর। যাদের হৃদযন্ত্র আক্রান্ত হয়েছে, তাদের কমপক্ষে ১০ বছর অথবা ৩০ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত নিতে হবে। যাদের বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ হয়েছে এবং যারা ভালভের অস্ত্রোপচার করেছে, তাদের আজীবন নিতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান শিশু বিভাগ, জাতীয় হদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।