বাংলাদেশ-মালদ্বীপ চার সমঝোতা সই

ঢাকা সফরে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মালদ্বীপ প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। সফরের দ্বিতীয় দিন বৃহস্পতিবার তিনি প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং সমুদ্র সম্পদ আহরণে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। অবশ্য তার আগ্রহের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বিষয়ক ৪টি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। মালদ্বীপের নির্বাহী প্রধান হিসেবে প্রেসিডেন্ট সলিহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুপুরে দুই দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে কানেক্টিভিটি ও বাণিজ্য বৃদ্ধির ওপর জোর দিয়েছেন উভয় নেতা। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকের পরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দু’দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল্লাহ শহীদ বলেন, যদি দু’দেশের মধ্যে ভালো কানেক্টিভিটি থাকে তবে বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।

মালদ্বীপে কোভিডের আগে প্রতি বছর ১৫ থেকে ২০ লাখ ট্যুরিস্ট বেড়াতে আসতো। বাংলাদেশ শুধুমাত্র মালদ্বীপের লোকদের নয়, ওইসব ট্যুরিস্টদের জন্য পণ্য পাঠাতে পারবে। তিনি বলেন, আজকে কানেক্টিভিটি বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রীর (শেখ হাসিনা) ঘোষণাকে আমরা স্বাগত জানাই। আকাশপথের পাশাপাশি আমরা সমুদ্রপথেও যোগাযোগ বাড়াতে চাই। আঞ্চলিক শান্তির বিষয়ে আব্দুল্লাহ শহীদ বলেন, আমরা দু’দেশ ভারত মহাসাগরে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করবো। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ মহাসাগরে যাতে করে বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। যৌথ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন বলেন- বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে আকাশপথে বিমান বাংলাদেশ শিগগিরই ফ্লাইট চালু করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া চট্টগ্রাম ও মালের মধ্যে একটি শিপিং লাইন আমরা দ্রুত চালু করতে পারবো। এবারের সফরে চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে জানিয়ে মোমেন বলেন, দু’দেশের মধ্যে ব্যাপক সহযোগিতার জন্য যৌথ কমিশন গঠন, দ্বিপক্ষীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন, মৎস্য বিষয়ক ও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ সহযোগিতা ও ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত সংস্কৃতি বিনিময় বিষয়ক কর্মসূচি নিয়ে উভয় পক্ষ সমঝোতা সই করেছে। মন্ত্রী মোমেন বলেন, শীর্ষ বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্ভাবনা উন্মোচনের ওপর জোর দেন। বাংলাদেশ মালদ্বীপের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বিষয়ক সমস্যা দূর করতে এক্ষেত্রে বিস্তারিত আলোচনার জন্য উভয় দেশের বাণিজ্য সচিব পর্যায়ে নিয়মিত বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে দু’দেশের সরকার একমত হয়েছে। শুল্ক সহযোগিতা ও দ্বৈত কর পরিহার বিষয়ক প্রস্তাবিত চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি দ্রুত চূড়ান্ত করার বিষয়ে উভয়পক্ষ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান মন্ত্রী। মন্ত্রী জানান, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মালদ্বীপ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী এ আমন্ত্রণ সানন্দে গ্রহণ করে দু’দেশের সুবিধাজনক সময়ে সেদেশ সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক নোটে বলা হয়েছে ২০২১ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে সভাপতি পদে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন নিশ্চিত করা হয়েছে। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের আঞ্চলিক পরিচালক পদে ২০২৩ সালের জন্য বাংলাদেশি প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন দেবে মালদ্বীপ। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠক শেষে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বুধবার বাংলাদেশ সফরে আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। তার সফরসঙ্গী হিসেবে এসেছেন মালদ্বীপের ফার্স্টলেডি ফাজনা আহমেদ, পররাষ্ট্র ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র সচিব।

Comments (0)
Add Comment