ভারতের বাংলা ছবির জনপ্রিয় অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত। নব্বই দশক থেকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রেও কাজ করছেন। অভিনয় করেছেন বেশ কয়েকটি হিন্দি চলচ্চিত্রেও। বাণিজ্যিক ও শৈল্পিক দুই ধারার সিনেমাতে সাবলীল অভিনয় তাকে এনে দিয়েছে ব্যাপক তারকাখ্যাতি। পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। অভিনয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও অনেকদিন ধরেই জড়িত ঋতুপর্ণা।
এবার করোনার মতো সংকটজনক পরিস্থিতিতেও নিজ দেশবাসীর পাশে দাঁড়ালেন তিনি। স্বামী সঞ্জয় চক্রবর্তীর সঙ্গে যৌথভাবে প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর করোনা রিলিফ ফান্ডে দিলেন অনুদান। এছাড়াও নিজের এনজিওর মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন খাবার।
নিয়মিত এসব মানুষকে সহায়তা চালিয়ে যাবার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন ঋতুপর্ণা।
বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত এই নায়িকা মাল্টিনিউজটোয়েন্টিফোরকে বলেছেন বিস্তারিতঃ
★সিঙ্গাপুরে কে কে আছেন?
-আমরা সবাই এখন সিঙ্গাপুরে। আমি, আমার স্বামী সঞ্জয় চক্রবর্তী, ছেলে অঙ্কন ও মেয়ে ঋষনা নিয়া।
★ কেমন কাটছে লকডাউন জীবন?
-শ্যুটিংয়ের ব্যস্ততা নেই, কাজের চাপ নেই এখন। পুরোটাই সংসারে মন দিতে পারছি । রান্না করছি, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছি।
এছাড়াও ছবি আঁকছি, গল্পের বই পড়ছি, রাতেরবেলা জমিয়ে নেটফ্লিক্সে মুভি দেখছি।
★সিঙ্গাপুরের অবস্থা কি? লকডাউন কেমন মানা হচ্ছে সেখানে?
-সিঙ্গাপুরে আংশিক লকডাউন চলছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু জিনিস যেমন মুদি দোকান, পেট্রোল পাম্প, গ্যাস স্টেশন, কিছু সেলুন, সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যাংক এসব খোলা আছে। অফিস, স্কুল, কলেজ, শপিং মল, টুরিস্ট স্পটগুলো বন্ধ। আমার সন্তানরা অনলাইনে ক্লাস করছে।
সবাই লকডাউনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সব ধরনের সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা হচ্ছে। রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ, হোম ডেলিভারিগুলো চালু আছে।
এখানকার প্রধানমন্ত্রী শুরুতেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যার জন্য তিনি খুব প্রশংসিত হচ্ছেন।
★ভারতের সাথে সিঙ্গাপুরের লকডাউনের কি তুলনা করবেন?
-সিঙ্গাপুর ছোট জায়গা। ভারত তো বিশাল দেশ। সুতরাং ভারতে লকডাউন খুব কঠিন বিষয়। কিন্তু গোটা ভারত এখন অভিন্ন শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ। আমি মনে করি অনেকের অনেক সমস্যা হলেও আমাদের সামনে সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।
আর সিঙ্গাপুরে খুব শক্ত নিয়ম চালু করা হয়েছে। সরকার খুব সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করছে।
আমরাও লকডাউনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। মানুষ নিয়ম-কানুন ভালোভাবেই পালন করছে।
আমার মতে, ভারতেও ভালোভাবে নিয়ম মানা হচ্ছে। সরকারও ভালো পদক্ষেপ নিয়েছে। লকডাউনের সময় বাড়ানোটাও ভালো উদ্যোগ। আমি জানি অনেকের খুব কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু এটা না করলে কষ্টটা যে বহুগুণ বেড়ে যাবে।
ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিক, সরকারি-বেসরকারি লোকসহ যারা এই সময়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের সবার জন্য আমি প্রার্থনা করছি।
তবে একটা চিন্তা হচ্ছে, যারা দৈনিক রোজগার করে তাদের জন্য। তাদের কাছে এই পরিস্থিতি খুবই সমস্যার। তাদের জন্য আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। আমি চেষ্টা করছি বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে যতটা সম্ভব সাহায্য করতে। এইভাবে সকলে এগিয়ে এলে অনেকটা সমাধান হবে বলেই আমার আশা।
★আপনি নতুন ইউটিউব চ্যানেল খুলেছেন। সেখানে আপনার নিজের লেখা কবিতা আবৃত্তি করে ব্যাপক প্রশংসিতও হয়েছেন…
-করোনা সংকটের কারণে চলচ্চিত্র, নাটক-টেলিফিল্ম সবকিছুর শুটিং বন্ধ রয়েছে। ঘরবন্দি মানুষকে বিনোদিত করতে তাই এই প্ল্যাটফর্ম বেছে নিলাম।
তবে এই চ্যানেলে কেবল বিনোদনই নয়, লাইফস্টাইল, সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়েও কথা বলবো। নাচ, গান, শর্ট ফিল্ম, আবৃত্তি সবকিছুই থাকবে এই চ্যানেলে। শুধু বাংলা নয়, হিন্দি ও ইংরেজি কনটেন্টও থাকবে এখানে। পাশাপাশি নতুন প্রতিভাবানদেরও জায়গা করে দেয়ার চেষ্টা করবো। কোন সাংবাদিকও কোন বিষয়ে তার মতামত ব্যক্ত করতে পারবেন।
★ এই সময়ে কাকে মিস করছেন?
-আমার মাকে, কলকাতায় আমার পরিবারকে মিস করছি। আমরা শ্বাশুড়িসহ ঘনিষ্ঠ যারা ভারতে আছেন, যারা এই রোগে আক্রান্ত হয়ে কষ্ট পাচ্ছেন তাদের সবাইকেই মিস করছি।
★ বাংলাদেশে আপনার ভক্তদের উদ্দেশ্যে কিছু বলতে চান?
-অবশ্যই! বাংলাদেশের সব মানুষের জন্যই আমি প্রার্থনা করছি। এখানে সিঙ্গাপুরে যেসব প্রবাসী বাংলাদেশীরা আছেন তাদের উদ্দেশ্যেও আমি বার্তা পাঠিয়েছি। আমাদের সবাইকে এক হয়ে লড়তে হবে।