আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির আয়োজক হলেও টুর্নামেন্ট শুরুর ছয় দিনের মধ্যেই ছিটকে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে পাকিস্তান। রাওয়ালপিন্ডিতে সোমবার ( ২৪ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড জিতলেই অথবা কোনোভাবে ১ পয়েন্ট পেলেই পাকিস্তানের বাদ পড়া নিশ্চিত।
কোনো বৈশ্বিক ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় আয়োজক দেশ এত দ্রুততম সময়ে সর্বশেষ কবে বিদায় নিয়েছে, তা নিয়ে গবেষণা হতেই পারে। তবে রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রাত থেকে পাকিস্তানের ক্রিকেট মহলে আলোচনায় রিজওয়ান-বাবর-আফ্রিদিদের হতাশাজনক পারফরম্যান্স।
অবশ্য, ‘এ’ গ্রুপে টানা দুই জয় সেমি-ফাইনালের পথ প্রায় পরিষ্কার করে ফেলেছে ভারত। তবে তাদের সঙ্গী হওয়ার পথে এখনও লড়াই চলছে। সেই লড়াইয়ে একটি জয় নিয়ে নিউজিল্যান্ড এগিয়ে থাকলেও আশায় আছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশও। সব সমীকরণই নির্ভর করছে বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ডের ম্যাচের ওপর।
মুলত ‘এ’ গ্রুপের লড়াইটা টিকে থাকবে রাওয়ালপিন্ডিতে নিউজিল্যান্ডকে বাংলাদেশ হারাতে পারলেই। আর কিউইরা জিতলে সব উত্তেজনা শেষ। নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের সেমি-ফাইনাল। একই সঙ্গে ভারতেরও। তাতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শেষ ম্যাচটা হবে কেবলই আনুষ্ঠানিকতার।
তবে বাংলাদেশ জিতলে সম্ভাবনা টিকে থাকবে সব দলেরই। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ জিতলে সেমি-ফাইনালে উঠতে পারে টাইগাররা। বড় ব্যবধানে জিততে পারলে অপর ম্যাচের দিকে খুব একটা তাকিয়েও থাকতে হবে না। সেক্ষেত্রে ভারতকে হারাতে হবে নিউজিল্যান্ডকে।
যদিও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের সঙ্গে যদি ভারতও তাদের বিপক্ষে জেতে, তাহলে টিকে থাকবে পাকিস্তানের আশাও। বাংলাদেশকে কিছুটা বড় ব্যবধানে হারাতে পারলে পাকিস্তান সেমিতে উঠবে প্রথম দুই ম্যাচ হারার পরও। তাই আপাতত বাংলাদেশের দিকেই তাকিয়ে আছে স্বাগতিকরা। গ্যালারীতে আজ পূর্ণ সমর্থন ত্রহাকবে টাইগারদের জন্যই।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ যদি শেষ দুই ম্যাচ জিতে এবং ভারতকে যদি কিউইরা হারায় তাহলে তৈরি হবে জটিল সমীকরণ। নিট রান রেটে এগিয়ে থাকা দুই দল যাবে সেমি-ফাইনালে। যেখানে বাদ পড়তে পারে প্রথম দুই ম্যাচে দারুণ জয় পাওয়া ভারত। অবশ্য তা এক অর্থে কঠিনই। কারণ রান রেটেও বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে ব্লুজরা।
এদিকে,চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরুর আগে শোয়েব আখতার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তানই ফাইনালে মুখোমুখি হবে। এমনকি গত রাতে ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে রিজওয়ানদের দল রোহিত-কোহলিদের হারিয়ে দেবে—এ কথাও বলেছিলেন।
সেই শোয়েব আখতার কালকের হারের পর ফুঁসে উঠেছেন। ক্রিকেট ইতিহাসের দ্রুততম এই বোলার পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্টকে ‘নির্বোধ’ বলেছেন। আরেক কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরাম পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে (পিসিবি) ‘সাহসী পদক্ষেপ’ নিতে বলেছেন। অর্থাৎ যারা ব্যর্থ হয়েছেন, তারা যত বড় তারকাই হোন না কেন, দল থেকে বাদ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আকরাম।
পাকিস্তান সমর্থকদের আবার হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
ম্যাচের ফল কী হতে চলেছে, সেটাও নাকি আগে থেকেই জানতেন শোয়েব। আর আকরাম জানিয়েছেন, ভারতের বিপক্ষে এমন হার দেখতে দেখতে তিনি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পোস্ট করা ভিডিওতে শোয়েব আখতারের চোখেমুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট বোঝা গেলেও তিনি বলেছেন, ‘আমি মোটেও হতাশ নই। কারণ, আমি জানতাম (ম্যাচের ফল) কী হবে। পুরো বিশ্ব ছয় বোলার নিয়ে খেলছে। আর তোমরা (পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্ট) পাঁচ বোলার একাদশে রাখতে পারলে না…তোমরা দুই অলরাউন্ডার নিয়ে খেলতে নামলে। এটা পুরোপুরি নির্বোধ ম্যানেজমেন্ট, এদের কোনো ধারণাই নেই।’
ভারতের বিপক্ষে হারে পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের কোনো দায় দেখছেন না শোয়েব, ‘বাচ্চাদের (খেলোয়াড়দের) আমি দোষারোপ করতে পারি না। তারা এই ম্যানেজমেন্টের মতোই। জানে না, তাদের কী করতে হবে। ইনটেন্ট একটি ভিন্ন জিনিস। ওদের রোহিত (শর্মা), বিরাট (কোহলি), শুবমানের (গিল) মতো দক্ষতা নেই। সুস্পষ্ট নির্দেশনা ছাড়াই তারা খেলতে নেমেছে। কেউ জানে না, তাদের কী করা উচিত।’
পাকিস্তান এখন বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে: ইউটিউব চ্যানেল স্পোর্টস সেন্ট্রালের ড্রেসিংরুম অনুষ্ঠানের ম্যাচ-পরবর্তী বিশ্লেষণে ওয়াসিম আকরাম বলেছেন, ‘আসলে এ ধরনের হারের সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে। আমরা গত দুই বছর ধরে এই খেলোয়াড়দের নিয়ে হেরেই চলেছি। এখন সাহসী পদক্ষেপ নেওয়ার সময় এসেছে।’
সাহসী পদক্ষেপ বলতে কী বুঝিয়েছেন, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন আকরাম, ‘আপনাকে তরুণ ও ভয়ডরহীন ক্রিকেটারদের নিতে হবে। দলে যদি পাঁচ-ছয়টা পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে সেটাই করুন। কোনো সমস্যা নেই। তাদের ছয় মাস সময় দিন ও সমর্থন করুন। ২০২৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দল এখন থেকেই প্রস্তুত করতে শুরু করুন। ওদেরকে (বর্তমান দলের খেলোয়াড়দের) আমার দেখা হয়ে গেছে। ওরা অনেক সুযোগ পেয়েছে।’
পাকিস্তান দলকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন ওয়াসিম আকরাম। ছবি: সংগৃহীত
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের শেষ ম্যাচ আগামী বৃহস্পতিবার রাওয়ালপিন্ডিতে, প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ। তবে আজ সোমবার নিউজিল্যান্ড জিতলেই বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ হয়ে দাঁড়াবে নিছক আনুষ্ঠানিকতার।