আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেছেন, বৈশ্বিক বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এছাড়াও এখন আইএমএফ-এর ঋণচুক্তির আলোকে সংস্কার কার্যক্রমগুলো সম্পন্ন করা, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে আনাও বড় চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য বাংলাদেশ বহুবিদ পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে অর্থনীতি সঠিক পথেই এগোচ্ছে বলে তারা মনে করেন।
আফ্রিকার দেশ মরক্কোতে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর বার্ষিক সভা উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শুক্রবার রাতে তিনি এসব কথা বলেন। আইএমএফ-এর রিজিওনাল ইকোনমিক আউটলুক অক্টোবর ২০২৩ শীর্ষক প্রতিবেদনের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অংশ প্রকাশ উপলক্ষ্যে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ বিষয়ে একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, বৈশ্বিক বিদ্যমান পরিস্থিতিতে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এটি ভুলে গেলে চলবে না যে, বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলের প্রতিটি দেশ বৈশ্বিক পরিস্থিতি থেকে সৃষ্ট সব ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। বৈশ্বিক প্রভাবে পণ্যের দাম বেড়েছে। বৈশ্বিক চাহিদায় মন্থরতা বিরাজ করছে। মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী কঠোর মুদ্রানীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। এসব বিষয় বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলছে। এ কারণে গত অর্থবছরের মতো চলতি অর্থবছরেও প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। আইএমএফ প্রবৃদ্ধির যে প্রাক্কলন করে, এর চেয়ে দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি বেশি থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। হিসাবের শিথিলতা ও কঠোরতার কারণে এ পার্থক্য হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এগুলোর মূল লক্ষ্য অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা। বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণের জন্য মুদ্রানীতি কঠোর করেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারকে আরও নমনীয় করেছে। রাজস্ব আয় বাড়ানোর নীতি গ্রহণ করেছে। মূল্যস্ফীতির অভিঘাত থেকে দুর্বল ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষকে রক্ষার জন্য সরকার ব্যয় বাড়িয়েছে। এসব কারণে দেশটির অর্থনীতি ক্রমেই স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে।
কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশের জন্য সামনের দিকে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, দেশটির কর্মক্ষম জনশক্তির সংখ্যা ব্যাপক। বিদ্যমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সংস্কার কর্মসূচিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। তাহলে দেশটি মধ্য আয়ের দেশে উন্নীতে হয়ে টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারবে।
বাংলাদেশের করণীয় প্রসঙ্গে কৃষ্ণা শ্রীনিবাসন বলেন, সংস্কারের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত টেকসই উন্নয়ন। এর জন্য অবকাঠামোগত খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এসব খাতে নিজস্ব বিনিয়োগ বাড়াতে রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। অর্থনীতির উৎপাদনশীলতাকে বাড়িয়ে তুলতে হবে।