বাংলাদেশিদের চিকিৎসায় কলকাতার বিকল্প কুনমিং!

রাজনৈতিক পালাবদলে সঙ্কটে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক। বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশির চন্য ভিসাও। গুরুতর অসুস্থতার প্রমাণ দিতে পারলেই মিলছে ‘মেডিক্যাল ভিসা’, তবে বন্ধ ‘ট্যুরিস্ট ভিসা’। আবার বাংলাদেশিদের মধ্যে বেড়েছে ভারতবিরোধী মনোভাব। সবমিলিয়ে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য বিকল্প হয়ে উঠছে চীনের কুনমিং শহরের হাসপাতালগুলো। এমন শঙ্কা কলকাতার বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

সম্প্রতি চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। ঢাকার একটি সূত্রের দাবি, বাংলাদেশি নাগরিকদের উন্নত চিকিৎসার জন্য কলকাতার ‘বিকল্প’ ব্যবস্থা করে দিতে চীনকে অনুরোধ করেছেন তিনি। সেই সূত্র বলছে, অনুরোধ পেয়ে চীনের সরকার কুনমিং শহরের ৩ থেকে ৪টি হাসপাতালকে বাংলাদেশি রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।

দক্ষিণ কলকাতার মুকুন্দপুরে মানিপল হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

গত বছর ৫ আগস্টের পর থেকে ভারত-বাংলাদেশ দিপক্ষীয় সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশিরা ভারতীয় ভিসা পাচ্ছে না। গুরুতর অসুস্থতা বা আপদকালীন পরিস্থিতির প্রমাণ দিতে পারলে ‘মেডিক্যাল ভিসা’ মিলছে। বন্ধ রয়েছে ‘ট্যুরিস্ট ভিসা’। ফলে কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। কলকাতার বড় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর হিসেব বলছে, বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ।

কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলো প্রথমে ভেবেছিল এই ধাক্কা ‘সাময়িক’। দ্রুত বাংলাদেশে স্বাভাবিকতা ফিরবে বলে আশা করেছিল তারা। তারা ভেবেছিল, আবার ট্যুরিস্ট ভিসা দেওয়া শুরু হবে এবং আগের মতই থাকবে রোগীর সংখ্যা।
কিন্তু সেখানে নতুন মোড় এনেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের চীন সফর। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে নিজ দেশের নাগরিকদের চিকিৎসার জন্য সহায়তা চান তৌহিদ।

ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের দাবি, তৌহিদের অনুরোধে সাড়াও দিয়েছে চীন। চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের সামনে কলকাতার ‘বিকল্প’ হিসেবে কুনমিং শহরের কথা বলেছে চীন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এমনই লেখা হয়েছে।

তবে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাত কলকাতার পরিবর্তে কুনমিংয়ের নিয়ন্ত্রণে যাবে বলে মনে করছেন না বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য কোনো শহরই কলকাতার বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে না। কলকাতা তাদের জন্য সবচেয়ে সুবিধাজনক শহর বলেই বাংলাদেশিরা এখানে আসেন। ভাষা, খাদ্যাভ্যাস, সংস্কৃতি— সব দিক দিয়ে কলকাতা বাংলাদেশিদের কাছে সুবিধাজনক। খাদ্যাভ্যাস, ভাষা ইত্যাদি প্রায় হুবহু মেলে বলেই চিকিৎসার জন্য অনেক দিন থাকতে হলেও বাংলাদেশিদের কোনো অসুবিধা হয় না। বাংলাভাষী চিকিৎসকদের নিজের সমস্যা বোঝাতেও অসুবিধা হয় না।

কলকাতার একটি হাসপাতালে রোগীর সেবায় নিয়োজিত দুই সেবিকা। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে কলকাতায় স্বাস্থ্য খাতের বাণিজ্য বড় ধরণের ধাক্কা খেয়েছে বলে স্বীকার করেছেন আরেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গৌতম খাস্তগির। তিনি বলেন, বাংলাদেশি রোগী আবার আগের জায়গায় ফিরতে কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু চীনের কুনমিং শহর বাংলাদেশিদের কাছে কলকাতার বিকল্প হয়ে উঠতে পারবে বলে মনে হয় না।

এই চিকিৎসক আরও বলেন, বাংলাদেশি রোগীরা চীনের কুনমিং সিটিতে গিয়ে চিকিৎসা করাবেন, এটা বাস্তবসম্মত নয়। কলকাতায় যতটা সহজে সব হয়, কুনমিংয়ে সেই সুবিধা মিলবে না। ফলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালগুলো তাদের বাংলাদেশি বাজার যে আবার ফিরে পাবে, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই।

Comments (0)
Add Comment