রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাউতুল কোরআন মাদরাসা ও এতিমখানা থেকে সাইফুল ইসলাম সাদ (২৩) নামে এক যুবককে আটক করা হয়। তার বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়।
ভাটারা থানা সূত্র জানায়, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে হত্যার পরিকল্পনায় যুক্ত সন্দেহে সাইফুল ইসলাম সাদকে আটক করা হয়। আজ শুক্রবার তাকে ৫৪ ধারায় করা জিডির সূত্রে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছে। আগামী রবিবার রিমান্ড শুনানি হতে পারে। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান।
এর আগেও বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র লিমিটেডের চেয়ারম্যান সায়েম সোবহান আনভীরকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাদ জানিয়েছেন, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় সায়েম সোবহান আনভীরের ওপর হামলার প্রস্তুতি ছিল তার। এর আগে তাকে খাবারে বিষ মিশিয়ে এবং ছুরিকাঘাতে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি মিসবাহ উদ্দিন সগির জানান, কিছুদিন ধরে সাদের গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হচ্ছিল। ফোনে কথা বলার সময় তার মুখে ‘হুইপ এবং শারুন’ শব্দ দুটি শুনতে পেয়ে তিনি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা কর্মীদের বিষয়টি অবহিত করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে সাদ আরো জানান, দৈনিক মজুরিভিত্তিক শ্রমিক হিসেবে তিনি বসুন্ধরা গ্রুপের এমডির হাউজে কাজ নেন। তিনি খামার থেকে বাসায় দুধ নিয়ে আসার কাজও করতেন। গত পূজার ছুটিতে পটিয়ায় গ্রামের বাড়িতে গেলে স্থানীয় মান্নান নামের এক ব্যক্তি তাকে এলাকার সাংসদ ও হুইপ সামশুল হকের কাছে নিয়ে যান। এরপর তার ছেলে শারুন চৌধুরীর সঙ্গেও সাদকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে তার হাতে ২০ হাজার টাকা তুলে দিয়ে কাজ বুঝিয়ে দেন শারুন।
সাদ জানান, বিশ্বাস অর্জন করার জন্য তিনি এরপর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় মাদরাসায় ভর্তি হন। ওই মাদরাসা থেকেই আজ সকাল ১১টায় তাকে আটক করে পুলিশ।
সাদের মোবাইলে পাওয়া একটি ছবিতে তাকে হুইপ সামশুল হকের সঙ্গে দেখা যায়। তিনি জানিয়েছেন, এটা ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময়ে তোলা ছবি। সাদ জানান, তিনি চট্টগ্রামের পটিয়া সেন্ট্রাল হাই স্কুলের দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় হুইপ সামশুলের কর্মী হান্নান ও মান্নানের সঙ্গে পরিচয় হয়। এই মান্নানই তাকে সামশুল হক এবং শারুনের কাছে নিয়ে যান। জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে যুক্ত একাধিক কর্মকর্তার ধারণা, এদের নির্দেশনায় পরিচয় গোপন করে সাদ বসুন্ধরা এমডির বাসায় কাজ নিয়ে থাকতে পারে।
এ ঘটনায় আজ ভাটারা থানায় বসুন্ধরা গ্রুপের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান মেজর (অব.) শেখ মিজানুর রহমান একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তাতে সাদ ছাড়া হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে হুইপ সামশুল হক চৌধুরী ও তার পুত্র শারুন চৌধুরীকে আসামি করার আবেদন করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরী বসুন্ধরা গ্রুপের এমডিকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। এর আগেও কয়েক দফা এ ধরনের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিল চক্রটি। অভিযোগে বলা হয়, এবারের পরিকল্পনা হয় গত দুর্গাপূজার ছুটিতে সাদ যখন গ্রামের বাড়িতে যায়।
সাউতুল কোরআন মাদরাসা ও এতিমখানা অধ্যক্ষ জানিয়েছেন, গত ১০ অক্টোবর ছুটি নিয়ে চট্টগ্রামে যায় সাদ। ১২ দিন ছুটি কাটিয়ে ২৩ অক্টোবর ফিরে আসে। এই অধ্যক্ষই সাদের বিষয়ে তাঁর সন্দেহের কথা বসুন্ধরার নিরাপত্তা কর্মীদের জানান।
অভিযোগটি তদন্ত করছেন ভাটারা থানার এসআই ও তদন্ত কর্মকর্তা হাসান মাসুদ।