সত্তর ও আশির দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ও প্রযোজক মেজবাহ উদ্দীন আহমেদ ওয়াসীম মারা গেছেন। রাজধানীর শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটে তার মৃত্যু হয় বলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান জানান।
জায়েদ খান জানান, ৭৪ বছর বয়সী ওয়াসীম দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস, হৃদযন্ত্র ও কিডনির জটিলতায় ভুগছিলেন।
শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে শনিবার রাতে তাকে শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসরারা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ অভিনেতা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না বলেও জানান জায়েদ খান।
সত্তর ও আশির দশকজুড়ে ফোক ফ্যান্টাসি ও অ্যাকশন চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ীভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন ওয়াসীম; সেই সময়ে শীর্ষ নায়কের মধ্যে একজন ছিলেন তিনি। তার অভিনীত দেড় শতাধিক চলচ্চিত্রের মধ্যে বেশিরভাগই সুপারহিট ছবি।
১৯৭২ সালে সহকারী পরিচালক হিসেবে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরুর পর ১৯৭৪ সালে মহসিনের পরিচালনায় ‘রাতের পর দিন’ সিনেমার মাধ্যমে নায়ক হিসেবে অভিষেক ঘটে ওয়াসীমের। প্রথম ছবিতেই দর্শকদের নজর কেড়ে কয়েক বছরের ব্যবধানেই ঢালিউডে নিজেকে শীর্ষস্থানে নিয়েছেন তিনি।
এস এম শফীর পরিচালনায় ‘দ্য রেইন’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে দর্শদের পাশাপাশি বোদ্ধামহলেও প্রশংসিত হয়েছিলেন ওয়াসীম। ছবিটি বিশ্বের ৪৭টি দেশে মুক্তি পেয়েছিল।
‘দ্য রেইন’ ছাড়াও দুই দশকের ক্যারিয়ারে ‘ডাকু মনসুর’, ‘জিঘাংসা’, ‘কে আসল কে নকল’, ‘বাহাদুর’, ‘দোস্ত দুশমন’, ‘মানসী’, ‘দুই রাজকুমার’, ‘সওদাগর’, ‘নরম গরম’, ‘আসামি হাজির’, ‘রাজ দুলারী’, ‘লুটেরা’, ‘লাল মেম সাহেব’, ‘জীবন সাথী’, ‘রাজমহল’, ‘বিনি সুতার মালা’, ‘বানজারান’র মতো হিট চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ওয়াসীম।
নায়িকাদের মধ্যে অলিভিয়া, রোজিনা, অঞ্জু ঘোষ, কবরী, শাবানার সঙ্গে সর্বাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন তিনি।
অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন ওয়াসীম। নিজস্ব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ডব্লিউ আর প্রোডাকশনে ব্যানারে নির্মাণ করেছেন ‘হিসাব চাই’, ‘মোহন বাঁশি’, ‘নয়া তুফানসহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র।
১৯৬৪ সালে বডি বিল্ডিংয়ের জন্য ‘মিস্টার ইস্ট পাকিস্তান’ খেতাব অর্জন করেছিলেন ওয়াসিম।
ব্যক্তিগত জীবনে অভিনেত্রী রোজী আফসারীর ভগ্নিপতি ও পরিচালক মালেক আফসারীর ভায়রা ওয়াসিম দুই সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ২০০০ সালে মারা গেছেন। মেয়ে বুশরা আহমেদ ২০০৬ সালে আত্মহত্যা করেছেন। একমাত্র ছেলে দেওয়ান ফারদিন আইন পেশায় নিয়োজিত আছেন।
১৯৪৭ সালের ২৩ মার্চ চাঁদপুরে জন্মগ্রহণ করেন ওয়াসীম।
জায়েদ খান জানান, রোববার জোহরের পর গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে ওয়াসীমকে সমাহিত করা হবে।