ইউরোপের ব্যস্ত জীবনে প্রতিটি মিনিট ব্যয় করতে হয় হিসাব করে। সেখানে সুমা দাস নিজের মেধা বিলিয়ে যাচ্ছেন নতুন প্রজন্মের জন্য। সময় কিংবা অর্থের দিকে না তাকিয়ে একঝাঁক শিশু কিশোরদের নিয়ে শুরু করেছেন বাংলা গানের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। প্রবাস হলেও ভীষণ সাড়া পাচ্ছেন তিনি।
শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতির শহর প্যারিসে বেড়ে ওঠা নতুন প্রজন্মের বিভিন্ন বয়সী বাংলাদেশি ছেলে মেয়েদের বাংলা ভাষা ও গান শেখানোর একমাত্র স্কুল ‘বাংলা স্কুল’। সেই প্রতিষ্ঠানেই দীর্ঘদিন ধরে ছেলে-মেয়েদের গান শেখাচ্ছেন তিনি।
নিজের সন্তানের মত ভালোবেসেই তিনি এই কাজ হাতে নিয়েছেন। মহান বিজয় দিবস থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি সব দিবসে স্কুলের অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও তার শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে গান পরিবেশনের মাধ্যমে।
এই ছেলেমেয়েদের কণ্ঠে বাংলা গান শুনে মুগ্ধ হন উপস্থিত দর্শকরা, করেন প্রশংসাও। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমার প্রাপ্তি এটাই।’
সুমা দাস আরও বলেন, ‘মানুষ আমাকে যে ভালোবাসা দিয়েছেন তার ঋণ শোধ করতে চাই গানের মাধ্যমে। আমি হয়তো থাকবো না কিন্তু এই ছেলে মেয়েরাই একদিন ফ্রান্সের বড় বড় মঞ্চে বাংলা গান পরিবেশন করবে। এটা ভেবে আমি আনন্দিত হই।’
সুমা দাসের জন্ম সিলেটের কুলাউড়ায়। সংস্কৃতি চর্চার জন্য সিলেট বিভাগে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে তার। শহরের ঐতিহ্যবাহী ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে প্রতি বছর বিজয় মেলায় যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হতো সেখানে তিনি নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করতেন ।
সাত বছর বয়স থেকেই তিনি গান শেখা শুরু করেন। সঙ্গীতে হাতেখড়ি তার মায়ের কাছেই। শিশু শিল্পী হিসেবেও তিনি গান গেয়েছেন অনেক বড় বড় মঞ্চে। রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে শুরু করলেও এখন আধুনিক ফোক গান গেয়ে বেশি জনপ্রিয়। প্যারিসের বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি নিয়মিত বাংলা গান পরিবেশন করেন। সেখানে তিনি পেয়েছেন বেশকিছু সম্মাননাও।
শুধু মঞ্চ নয়; বেতারেও তিনি গান পরিবেশন করেছেন। সিলেট বেতারের পাশাপাশি বিটিভিসহ বেসরকারি চ্যানেলে তার নামডাক রয়েছে। তবে গানের পাশাপাশি সাহিত্য অঙ্গনেও রয়েছে তার পদচারণা। লেখেন সাহিত্য পত্রিকাতে। কবিতার বইও প্রকাশিত হয়েছে এই শিল্পীর।
ফ্রান্সে স্বামী অজয় দাসের সঙ্গে বাস করছেন সুমা দাস।