ক্ষমতায় থাকা ব্যক্তিরা নানা সময়ে রাজনৈতিক রোষের শিকার হতেই পারেন। সম্প্রতি কুশল বিনিময়ে হাত বাড়ানো ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাঁক্রোকে চড় খাওয়ার ঘটনা সামাজিক যোগাযোগেরমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
করোনাভাইরাস মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করেছে ফ্রান্স। তাই মঙ্গলবার ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের দ্রোমে এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে গিয়েছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রো। এসময় দর্শনার্থীদের কাতারে দাঁড়িয়ে থাকা একজন তার মুখে চড় দিয়েছেন। তবে সাধারণ নাগরিক দ্বারা লাঞ্ছনার শিকার হওয়া নেতা তিনি শুধু একা নন, এ তালিকায় আরও অনেকেই রয়েছেন। নিউইয়র্ক পোস্ট ও এএফপির প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক মঞ্চে আক্রমণের শিকার হয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ থেকে শুরু তরে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর হলিউড তারকা আরনল্ড শোয়ার্জেনেগার পর্যন্ত।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ঘটনার ভিডিওতে দেখা গেছে, কোমরসমান উচ্চতার ব্যারিকেডের এক পাশে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শুভানুধ্যায়ীদের দিকে এগিয়ে যান ম্যাঁক্রো। সবুজ রঙের টি-শার্ট, সানগ্লাস ও মাস্ক পরা একজনের দিকে হাত বাড়িয়ে দেন তিনি। এ সময় লোকটিকে বলতে শোনা যায়, ‘ম্যাঁক্রোবাদের পতন হোক।’ এরপরই ডান হাত দিয়ে মুখোমুখি দাঁড়ানো ম্যাঁক্রোর মুখে সজোরে চড় মারেন তিনি।
তখন ফরাসি প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের দুজন এগিয়ে গিয়ে লোকটিকে মাটিতে ফেলে দেন। আরেকজন ম্যাঁক্রোকে সরিয়ে নেন। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই ম্যাঁক্রোকে আবার সেখানে এসে ব্যারিকেডের অপর পাশের কারও সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়।
প্রেসিডেন্ট ম্যাঁক্রোকে আঘাতকারী ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি। কেন তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন, তাও স্পষ্ট হয়নি।
জর্জ ডব্লিউ বুশ
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বুশের দিকে জুতা ছোড়ার ঘটনাটি ঘটেছিল। ইরাকের বাগদাদে সংবাদ সম্মেলন করছিলেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ। প্রশ্নের বদলে হুট করেই তার দিকে উড়ে আসে এক পাটি জুতা। জুতা জোড়া ছুড়েছিলেন ইরাকি সাংবাদিক মুনতাধার আল-জাইদি।
মার্কিন প্রেসিডেন্টকে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমগুলোর শিরোনাম হয়েছিলেন জাইদি। জুতা অবশ্য বুশের গায়ে লাগেনি। সাবেক প্রেসিডেন্ট ঠিক সময়ে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ায় দুই জুতাই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিলো। ঘটনার আকস্মিকতায় সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলেন। পরে নিরাপত্তাকর্মীরা টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে নিয়েছিলেন জাইদিকে। পরে তাকে এই অপরাধের শাস্তি হিসেবে কারাগারে থাকতে হয়েছে।
জুলিয়া গিলার্ড
২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ড স্যান্ডউইচ হামলার শিকার হয়েছিলেন। দেশটির কুইন্সল্যান্ডে একটি স্কুল সফরের সময় প্রধানমন্ত্রী জুলিয়া গিলার্ডকে লক্ষ্য করে স্যান্ডউইচ ছোড়ার ঘটনা ঘটে। তবে চট করে সরে যাওয়ায় এটি তার শরীরে লাগেনি। ওই ঘটনার সময় জুলিয়া বলেন, ‘এক কিশোর ভেবেছিল সে কিছুটা দুষ্টুমি করছে।’ এ ঘটনায় সন্দেহভাজন এক শিক্ষার্থীকে ১৫ দিনের জন্য স্কুল থেকে বরখাস্ত করা হয়। ওই শিক্ষার্থী অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে।
আরনল্ড শোয়ার্জেনেগার
হলিউড কিংবদন্তি ও ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক গভর্নর নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে ২০০৩ সালে ডিম হামলার শিকার হয়েছিলেন। ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারের সময় তার কাঁধে কেউ কাঁচা ডিম ছুড়ে মেরেছিলো। ওই সময় তিনি পোডিয়ামে হেঁটে যাওয়ার সময় সমর্থকদের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছিলেন।
এরপর ২০১৯ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গের স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে আরেকটি অপ্রীতিকর ঘটনার মুখে পড়েন তিনি।
বার্ষিক আরনল্ড ক্ল্যাসিক আফ্রিকা ইভেন্টের অংশ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়েছিলেন ৭১ বছর বয়সী এই তারকা। ভক্তদের সঙ্গে স্ন্যাপচ্যাটে ভিডিও রেকর্ড করছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ এসে তার পিঠে দুম করে এক ‘ফ্লাইং কিক’ বসালেন এক অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি। লাথি খেয়ে ক্ষণিকের জন্য ভারসাম্য হারালেও কুপোকাত হননি ৭১ বছর বয়সী আরনল্ড শোয়ার্জেনেগার। কিন্তু বেশ খানিকটা দূর থেকে এসে ফ্লাইং কিক দেওয়ায় ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান ওই আক্রমণকারী। সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য তাকে কাবু করেন শোয়ার্জেনেগারের নিরাপত্তারক্ষীরা।
সিলভিয়া বেরলুসকোনি
২০০৯ সালে ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি ভয়াবহ হামলার শিকার হয়েছিলেন। মিলানের একটি ক্যাথেড্রালে ধাতব রেপ্লিকা দিয়ে তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছিলো। এতে তার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এ ছাড়া ৭৩ বছর বয়সী বেরলুসকোনির দুটি দাঁতও ভেঙে যায়। নাকেও আঘাত পান তিনি। সুস্থ হতে তাকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়।
বলসোনারোকে ছুরিকাঘাত
২০১৮ সালে ছুরিকাঘাতের শিকার হন বর্তমান ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো। নির্বাচনের প্রচারে গেলে রিও ডি জেনিরো থেকে ২০০ কিলোমিটার উত্তরের শহর জুইজ দে ফোরাতে এক দুর্বৃত্ত তাকে ছুরিকাঘাত করে বসে। ওই ঘটনার পর জনগণের সহানুভূতি সৃষ্টি হয় তার পক্ষে। যার উপর ভর করে তিনি ক্ষমতায় আসেন। ওই আঘাতের পর দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। তার ওপর আক্রমণকারীকে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়।