অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ফ্যাসিস্টের বিচার, সংস্কার এবং আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। কত দিনের মধ্যে জনগণ বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন দেখতে পাবে সেটা জানাতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (১০ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইফতার পূর্ববর্তী সমাবেশে তিনি এই আহ্বান জানান। জুলাইয়ে শহীদ ও আহতদের পরিবার নিয়ে এই ইফতারের আয়োজন করে এনসিপি।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে নাহিদ ইসলাম বলেন, সরকারকে বলব, দ্রুত বিচার ও সংস্কারের রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে। কত দিনের মধ্যে এবং কোন প্রক্রিয়ায় আমরা দৃশ্যমান বিচার ও সংস্কার দেখতে পারব, তার সুস্পষ্ট রোডম্যাপ অবিলম্বে ঘোষণা করতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, নির্বাচিত সরকার এসে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসিত করবে না- এই নিশ্চয়তা নেই৷ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিচার ও সংস্কারে সহায়তা করলে দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে এনসিপি সহায়তা করবে৷ প্রধান উপদেষ্টা, সেনাপ্রধান সবাই সুষ্ঠু বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন৷ সেটি নিশ্চিত করতে হবে। কড়ায় গণ্ডায় জবাব নেওয়া হবে৷
সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে জানিয়ে সদ্য পদত্যাগ করা এই উপদেষ্টা বলেন, আমরা প্রধান উপদেষ্টাসহ যেসব উপদেষ্টাকে সরকারের ক্ষমতায় বসিয়েছি, তাদের কাছে আমরা কড়ায়-গন্ডায় জবাব নেব, আমাদের সংস্কার কতটা আদায় হলো। রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের জন্য এতই তাড়াহুড়া করে, তাহলে ভোট চাইতে গেলে কিন্তু তাদের জবাব দিতে হবে। বাংলাদেশে যে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছে, সেটাকে আমরা ধরে রাখতে চাই।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা সাধারণ জনতার কাতারে নেমে এসে নতুন একটি দল গঠন করেছি। জুলাই আন্দোলনের যে আকাঙ্ক্ষা, তার ভিত্তিতে আমরা কারো ওপর নির্ভরশীল হতে চাই না। যে কারণে আমরা নিজেরাই মাঠে নেমে সেই দাবি বাস্তবায়ন করতে চাই।
এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক তাসনিম জারা বলেন, বিগত কয়েক মাসে আপনাদের অনেকের সঙ্গে চিকিৎসা নিয়ে কাজ, কথা হয়েছে। আপনারা কেমন বাংলাদেশ চান সেই গল্পগুলো আমার হৃদয়ে গেঁথে আছে। যেকোনো সাধারণ মানুষের বিচার দ্রুততম সময়ের মধ্যে হবে, হেনস্তার শিকার হবে না, এটাই আমরা নতুন বাংলাদেশে বলি। এত ত্যাগ শুধু এক শাসন থেকে অন্য শাসন ব্যবস্থায় যাওয়া নয়, পুরো শাসন ব্যবস্থাটাই পরিবর্তন করা।
এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, কিছু বিষয়ে আমাদের ঐকমত্যে আসতে হবে। খুনি হাসিনাকে অবিলম্বে বিচারের কাঠগড়ায় আনতে হবে। আমরা অলরেডি সবাই শহীদ হয়ে গেছি, আমাদের আর কোনো ভয় নেই। বিভিন্ন গোষ্ঠী, ব্যবসায়ী, বুদ্ধিজীবী যারা ফ্যাসিবাদের পক্ষে গত ১৫ বছর ছিল, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিচারালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সংস্কারের আওতায় আনতে হবে। আমরা নতুন সংবিধান, গণপরিষদ ও বিচারের দাবিতে মাঠে নামব।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সব খুনের নির্দেশদাতা খুনি হাসিনা ভারতে বসে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমরা দাবি জানাই, অতিদ্রুত তাকে ফিরিয়ে এনে কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। দেশে আনা না গেলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তার বিচার করতে হবে। সরকার যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো জাতির সামনে পেশ করেছে, সেগুলো তারাই বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির উওরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, যারা বিচারের আগে নির্বাচনের কথা বলবে তাদের মুখের ওপর বলবেন যে, শহীদদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে বিচার না করে নির্বাচনের কথা বলতে লজ্জা লাগে না? আমরা সবাই নির্বাচন চাই। কিন্তু যে খুনি হাসিনার নির্দেশে এতগুলো রক্ত গিয়েছে, সেই খুনি হাসিনার বিচার হওয়ার আগে কোন মুখে তারা নির্বাচনের কথা বলে? খুনি হাসিনার বিচারের দাবি আমরা বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে চাই।