ফের গিনেস বুকে রেকর্ড গড়লেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাসেল

বাম স্কিপ বা বসে ঘুরিয়ে দড়ি লাফানো খেলায় নৈপুণ্য দেখিয়ে ভারত ও জাপানকে টপকে নিজেকে বিশ্ব দরবারে মেলে ধরলেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাসেল। পঞ্চম ও ষষ্ঠবারের মতো ওয়ার্ল্ড গিনেস রেকর্ডে আবারো নাম লিখিয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করলেন তিনি।

১ মিনিটে ১৬০ বার ও ৩০ সেকেন্ডে ১১৭ বার বসে দড়ি লাফিয়ে ২টি রেকর্ড গড়েন ২০ বছর বয়সী উদ্যমী এই তরুণ। ইতোমধ্যে ওয়ার্ল্ড গিনেস বুক কর্তৃপক্ষের দেওয়া সনদ দুটি হাতে পেয়েছেন তিনি। এ নিয়ে ছয়বার স্কিপিং রোপে গিনেস বুকে রেকর্ডের মালিক এখন তিনি।

রাসেলের এ কৃতিত্বে খুশি পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী। অলিম্পিকের মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অংশ নিয়ে দেশের সুনাম বয়ে আনতে চান রাসেল।

এদিকে রাসেলের সর্বশেষ ৩০ সেকেন্ডে ১১৭ বার বসে দড়ি লাফানোর বিশ্ব রেকর্ডসের সংবাদটি ফলাও করে প্রচার করেছে ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম।

রাসেল ইসলাম জানান, ২০২১ সালে শুরুর দিকে বসে দড়ি লাফানোর দুটি রেকর্ডে ভাঙার চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করি। আবেদনের ৩ মাসের মধ্যে গিনেস কর্তৃপক্ষ মেইলের মাধ্যমে যাবতীয় দিক-নির্দেশনা দেন। পরে সেই নিদের্শনামতে প্রথম দফায় ১ মিনিটে ১৬০ বার বসে দড়ি ঘুরিয়ে রেকর্ড করি। এর আগে এ রেকর্ড ছিল এক ভারতীয় যুবকের। তিনি ১ মিনিটে ১৪৯ বার স্কিপিং ঘুরিয়েছে। এরপর এ বছরের ১৩ মার্চ আবারো বসে ৩০ সেকেন্ডে ১১৭ বার বাম স্কিপ করে গিনেস বুকে রেকর্ড করি। তার আগে এই রেকর্ড ছিল জাপানের এক নাগরিকের। তিনি ৩০ সেকেন্ডে স্কিপিং ঘুরিয়েছে ১০৩ বার।

রাসেল আরও বলেন, এখন আমি দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অলিম্পিকসহ বড় বড় ম্যাচগুলোতে অংশ নিয়ে খেলতে চাই। বিশ্বের বুকে দেশের নাম উঁচুতে নিয়ে যেতে চাই।

রেকর্ড গড়া কিংবা ভাঙাকে যেন অভ্যাসে পরিণত করেছেন রাসেল! ২০১৯ সাল থেকে রোপে একের পর এক রেকর্ড গড়েই চলেছেন। ওই সময় স্কিপিং রোপে ৩০ সেকেন্ডে এক পায়ে ১৪৫ বার দড়ি লাফিয়ে রেকর্ড করেন। পরে আরেকটি ইভেন্টে ১ মিনিটে ২৫৮ বার লাফিয়ে রেকর্ড করেন রাসেল।

এরপর ২৫৮ বার দড়ি লাফিয়ে যে রেকর্ড গড়েছিলেন, সেটি হাতছাড়া হয়ে যায় তার। ২৫৯ বার লাফিয়ে রাসেলের রেকর্ড ভেঙেছেন ভারতের একজন। পরে ২৬২ বার লাফিয়ে পুনরুদ্ধার করে আগের রেকর্ড। এর আগে স্কিপিং রোপ এক জাম্পে ২ বার দড়ি ঘোরানো ইভেন্টে ৩ মিনিটে ৪৫৮ বার লাফিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন এই তরুণ।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউপির হরিহরপুর সিরাজপাড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক বজলুর রহমানের ছেলে রাসেল। শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তিনি।

রাসেলের বাবা বজলুর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলে একটি দড়ি নিয়ে লাফাত। তাকে কখনো বাধা দেইনি। রাসেল বলতেন বাবা আমি একদিন এ খেলা দিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ব। আজ তার স্বপ্ন সত্যি হলো।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান বাবু বলেন, রাসেলের এ রেকর্ড দেশের জন্য গৌরবের। আমরা সব সময় তার পাশে আছি। ভবিষ্যতে যেকোনো ধরনের সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত।

এদিকে রাসেলকে রোপ-স্কিপিংয়ে প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আশিফুল হাসান। তিনি বলেন, আমাদের ফেডারেশনের কয়েকটি ক্যাটাগরি রয়েছে। রোপস্কিপিং হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম। রাসেলকে এই ক্যাটাগরির প্রধান প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তার মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে এ জাতীয় খেলোয়াড় উঠে আসবে বলে আশা করি।

Comments (0)
Add Comment