বাংলা সিনেমার গোড়াপত্তন থেকে দর্শক আকর্ষণে ব্যবহার করা হত হাতে আঁকা পোস্টার ও ব্যানার। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যায় থাকে হাতে আঁকা পোস্টারের শিল্পীরা। রঙ তুলিতে পোস্টারে হারিয়ে যাওয়া সেই ঐহিত্য ফিরিয়ে আনছে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমা সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সোনালী যুগে যাদের হাতের তুলির স্পর্শে পোস্টার আঁকা হতো, সেই সকল শিল্পশৈলী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা হয়েছে।
তাদের হাতে তৈরি হচ্ছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার নতুন পোস্টার। সিনেমারটির পরিচালক দীপঙ্কর দীপন মনে করেন, এসব শিল্পীরা ঐতিহ্যের অংশ। তিনি বলেন, তাদের হাতে আঁকা পোস্টার বিভিন্ন লোকো মোটিভ বহন করে। কালের বিতর্তনে অনেক কিছুর পাশাপাশি এই ঐহিত্যও হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু পোস্টারের ঐহিত্যকে ফিরিয়ে আনতে না পারলেও তাদের আমরা স্মরণ করতে চাই। আগামীর সিনেমাগুলোতে যদি একটি করে পোস্টারও তাদের মাধ্যমে তৈরি করা হয় তাহলে এই মানুষগুলো সারাজীবন যে কাজটি করে এসেছে সেটা এই সময়ে করতে পারলেও গর্বিত হবে।
উদাহরণ টেনে ‘ঢাকা অ্যাটাক’খ্যাত পরিচালক বলেন, জাপানে এখনো টুরিস্টদের জন্য নো এবং কাবুকি থিয়েটারে হাইলি পেইড সম্মানীতে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় ঐহিত্য ধরে রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এটা জাপানে যাওয়া টুরিস্টদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ এবং ঐহিত্যকে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
‘অপারেশন সুন্দরবন’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন র্যাব। এর মুখপাত্র লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আগে এই পেশাটি অনেক লুকরেটিভ ছিল। এসব শিল্পীদের পিছনে মানুষ ঘুরে বেড়াতো। নান্দনিক এসব পোস্টার দিয়ে আগে সিনেমা প্রচারণা হতো। এসব পোস্টার এতটাই নজর কাড়ত যে দর্শক সিনেমা হলে আসতো। কিন্তু ২০১০ সালের পর থেকে এভাবে হাতে আঁকা পোস্টার আর দেখা যায়নি।
তিনি বলেন, হাতে আঁকা পোস্টারের এই ঐতিহ্যকে আবার সামনে আনার চেষ্টা করছে র্যাব। সুভিনিয়র হিসেবে হাতে আঁকা পোস্টার তৈরি করছে। যেখানে ৩টি পোস্টার ও ১টি ব্যানার তৈরি করছি এবং চলচ্চিত্রের সোনালী যুগে হাতে তৈরি পোস্টার যারা তৈরি করতেন সে সকল শিল্প ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানিয়ে অপারেশন সুন্দরবন চলচ্চিত্রের পোস্টার তৈরি করে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে এ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরাই আমাদের উদ্যোগ।
১৬৬১ সাল থেকে দেয়ালে পোস্টার আকার মাধ্যমে পোস্টার আঁকা শুরু করেন বিদেশ কুমার ধর। তিনি জানান, ১৬৬৫ তিনিই প্রথম উর্দু সিনেমা ব্যানার হাতে আঁকেন। তার বানানো রঙিন ব্যানার ছিল ‘গুনাইবিবি’ সিনেমার। পাশাপাশি সিনেমার পোস্টার এঁকেছিলেন উর্দু ‘পূনম কিরান’ সিনেমার। ছিল যেটি ছিল প্রথম রঙিন সিনেমার পোস্টার। বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে ষাট শতাংশ সিনেমার হাতে আঁকা পোস্টার আমারই।
বিদেশ কুমার ধর বলেন, র্যাব আমাদের খুঁজে বের করে যে সম্মান দিয়েছে এই সম্মান আজ পর্যন্ত কেউ দেয়নি। তারা জানতে চেয়েছে কেন সরে গিয়েছি, কোথায় আছি, কেন আমাদের মতো শিল্পীদের মূল্যয়ন নেই। হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকলে যে চিকিৎসা দেয়া হয় র্যাব আমাদের শেষ সময়ে পাশে এসে তেমনভাবে সেবা দিয়েছে। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা মিলিয়ে আধুনিক ও ঐহিত্যের মিশেলে পোস্টার বানানোর চেষ্টা করছি।
র্যাব ওয়েলফেয়ার কো-অপারেটিভ সোসাইটি লি. প্রযোজিত সিনেমা অপারেশন সুন্দরবন। পরিচালক দীপঙ্কর দীপন বলেন, এটি পুরোপুরি মূল ধারার সিনেমা। এখানে অ্যাকশন, সাসপেন্স, আবেগ, প্রেম-গান সব আছে। গণমানুষকে কানেক্ট করার সিনেমা অপারেশন সুন্দরবন। সেই সাথে ক্লাস পিপল যেন পছন্দ করে সেই চেষ্টা আছে।
এর বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করছেন রিয়াজ, সিয়াম, রোশান, নুসরাত ফারিয়া, দর্শণা বণিক, সামিনা বাশার, শতাব্দী ওয়াদুদ, মনির খান শিমুল, তাসকিন রহমান, মনোজ প্রামানিক , দীপু ইমাম, এহসানুর রহমান প্রমুখ।