৮ নভেম্বর, প্ল্যাট-ফর্মস গ্যালারিতে শুরু হয়েছে শিল্পী এম. এফ. আই. মজুমদার শাকিলের একক প্রদর্শনী -বিয়ন্ড দ্য ভেইল। প্রদর্শনীতে প্রাচীন কাঠছাপ বা উডকাট মাধ্যমকে আধুনিক শিল্পচর্চার এক নতুন রূপে উপস্থাপন করেছেন শাকিল। এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে মোট ২৪টি উডকাট প্রিন্ট, যার মধ্যে ৮টি বৃহৎ আকারের কাজ বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।
শাকিলের কাজে দেখা যায় রঙ ও রেখার এক অনন্য সংলাপ—অ্যাম্বার, গাঢ় নীল এবং সাদা-কালোর বৈপরীত্যে তিনি তৈরি করেছেন এক গভীর ও আবেগময় জগৎ। তাঁর ছবিতে নারীর উপস্থিতি প্রকাশ পায় কাপড়, ভাঁজ ও ছায়ার স্তরের মধ্য দিয়ে। এখানে পর্দা কোনো আড়াল নয়, বরং এক নতুন পথ—যেখানে দেখা আর না দেখার সীমা মিশে যায়।
প্রতিটি কাঠের কাট ও স্তর যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে কাপড়, স্মৃতি, গোপনতা ও স্বাধীনতার স্পর্শে। তাঁর এই কাজগুলো শুধু প্রতিকৃতি নয়; বরং আমাদের উপলব্ধি, পরিচয় ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শেখায়।
শিল্পের ঐতিহ্যের ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে থেকেও শাকিল পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সাহসী। তাঁর বহুস্তর কাঠছাপে আলোর ও ছায়ার খেলা এক অনন্য আবহ তৈরি করে, যা কাঠছাপের দৃঢ় মাধ্যমকে দিয়েছে নতুন প্রাণ ও অনুভূতি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রিন্টমেকিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুজ্জামান আনিস বলেন,
“শাকিলের কাজের মূল শক্তি হলো তাঁর বহুস্তর কাঠের ব্লক ব্যবহার, টোনাল ভিন্নতা এবং বড় মাপের কম্পোজিশন। তাঁর নিখুঁত কাটিং ও লেয়ারের কাজ প্রতিটি প্রিন্টকে দিয়েছে গভীরতা ও টেক্সচারের সমৃদ্ধি।”
প্ল্যাট-ফর্মস গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা রায়না হোসেন বলেন,“শাকিলের কাজ দৃশ্যমানতার রাজনীতিকে নতুনভাবে ভাবতে শেখায় এবং বিশ্ব প্রিন্টমেকিং-এর ভাষাকে প্রসারিত করে।”
বিয়ন্ড দ্য ভেইল প্রদর্শনীর মাধ্যমে শাকিল শুধু সৌন্দর্যের নয়, উপলব্ধিরও এক নতুন দ্বার খুলে দিয়েছেন। তাঁর কাজ কাঠের শক্ত পৃষ্ঠে হাতে কাটা শ্রমের ছাপ রেখে, আলো ও ছায়ার কবিতায় রূপ নেয়। এই প্রদর্শনী প্ল্যাট-ফর্মস গ্যালারির সেই অঙ্গীকারেরই অংশ—যেখানে বাংলাদেশের শিল্পীরা তাঁদের ঐতিহ্য ও সমকালকে যুক্ত করে বিশ্বমঞ্চে নতুনভাবে তুলে ধরছেন। প্রদর্শনী চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত।