প্লাস্টিকের বর্জ্য সহজেই গলে পচে মাটিতে মিশে যায় না। এ কারণে প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বহু বছর ধরেই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, কীভাবে প্লাস্টিকের বর্জ্য রিসাইকেল করে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা যায়। তবে আক্ষরিক অর্থে প্লাস্টিক খেয়ে ফেলতে পারে এমন এক ছত্রাক আবিষ্কারের খবর পাওয়া গেছে।
বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সামান্থা জেংকিনস নামের এক গবেষক অন্য একটি বিষয়ে গবেষণার কাজ করতে গিয়ে দৈবচক্রে এমন এক ছত্রাক আবিষ্কার করেছেন যা প্লাস্টিক খেয়ে ফেলতে সক্ষম। এ আবিষ্কার পৃথিবীর পরিবেশ রক্ষায় কত বড় ভূমিকা রাখবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, স্থলভাগ পেরিয়ে প্লাস্টিকের বর্জ্যগুলো জলভাগের গভীর তলদেশে ছড়িয়ে গেছে। তিমির মত নানা প্রাণির পেটে পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো। এমনকি মানব ভ্রুনের প্লাসেন্টাতেও ঢুকে পড়েছে প্লাস্টিকের কণা। একটি মাত্র প্লাস্টিক ব্যাগ মাটিতে মিশে যেতে সময় লাগে প্রায় ১ হাজার বছর। এ জন্য প্লাস্টিকের বর্জ্য কীভাবে সহজেই রিসাইকেল করা যায় তা ছিল বিজ্ঞানীদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
পরিবেশ সংগঠন গ্রিনপিস বলেছে, ২০১৫ সাল নাগাদ পৃথিবীতে ৬৩০ কোটি টন প্লাস্টিক ছড়িয়ে পড়েছে যারা মাত্র ৯ শতাংশই রিসাইকেল সম্ভব হয়েছে। বাকিগুলো পুড়িয়ে ফেলা হয় কিংবা ফেলে দেওয়া হয়। এতে পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে। তাই এটি রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ অতিব প্রয়োজন।
নিজের আবিষ্কার সম্পর্কে সামান্থা জেংকিন্স বলেছেন, ‘ধরুন একটি জার ভর্তি শস্যকণার ওপর কিছু ছত্রাক জন্মেছে। ব্যাপারটা দেখতে স্বাভাবিকের মতোই লাগবে। এটি মোটেও উত্তেজনাকর কিংবা আকর্ষণীয় কিছু না। কিন্তু যখনই জারটা খোলা হলো, দারুন একটি ব্যাপার ঘটে গেছে। আমরা জারটিতে বায়ুরোধী প্লাস্টিকের স্পঞ্জ দিয়েছিলাম, যা ছত্রাকগুলো খেয়ে হজম করে ফেলেছে। এটি সত্যিই বিস্ময়কর ঘটনা। ’
সামান্থা জানান, তিনি ছত্রাকগুলোকে পিইটিআর পলিইউরিথেনের ওপর পরীক্ষা করে দেখছেন। ছত্রাকের কাছে প্লাস্টিক রাখা হচ্ছে, আর সেটি ক্রমেই পাল্টিক খেয়ে ফেলছে। তারপর সেই ছত্রাক জন্ম দিচ্ছে আরও ছত্রাকের, যা দিয়ে নানারকম জৈব পদার্থও তৈরি করা যাবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল জৈবভিত্তিক পদার্থকে ইনসুলেশন প্যানেল তৈরিতে কীভাবে ব্যবহার করা যায় সেটি পরীক্ষা করা। তবে প্লাস্টিক খেকো ফাঙ্গাস আবিষ্কার আমাদের গবেষণাকে অন্য দিকে নিয়ে গেলো।’ প্লাস্টিক বর্জ্য মুক্তকরণে কীভাবে এই ফাঙ্গাসটিকে আরও শক্তিশালী জাত হিসেবে তৈরি করা যায় তা নিয়ে তার প্রতিষ্ঠান বায়োহম কাজ করছে বলেও জানান তিনি।