নতুন বছরে নতুন স্বপ্ন বুনছেন সমতলের চা শ্রমিকরা। চা বাগানগুলোতে গাছের মাথা ছেঁটে দিতে এখন ব্যস্ত তারা। দুই বছর ধরে নানা নাটকীয়তা অনেকভিুগিয়েছে চা শ্রমিকদের। এবার সেই ভোগান্তির ক্লান্তি মুছে আবারও ঘুরে দাড়াতে শুরু করেছেন তারা। চট্টগ্রাম-সিলেটের পর চায়ের রাজ্য হিসেবে পরিচিতি পাওয়া পঞ্চগড়ের সমতলের চা বাগান ঘুরে দেখা গেছে এই চিত্র।
জানা গেছে, টানা দুই মাস চা প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়টিতে চা পাতা উত্তোলন হবে না। তাই প্রুনিং (গাছ পরিপূর্ণ হওয়ার পর গাছকে সুস্থ, সবল ও স্বাভাবিক রাখা এবং উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য গাছের কোনো অংশ যেমন- কান্ড, শাখা, পাতা, ফুল কেটে দেয়া) কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে দুই মাসে।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয় পঞ্চগড়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বাগান মালিক ও চা বোর্ড বলছে, চায়ের নতুন বছরের সঙ্গে চায়ের গুণগত মান নিশ্চিত করতে টানা দুই মাস পঞ্চগড়ের চা প্রক্রিয়াজাত কারখানাসহ পাতা উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে সমতলের এই চা নিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখলেও গত দুই বছরের অধিক সময় ধরে বাগান মালিকদের পাতার ন্যায্য মূল্য না পাওয়াসহ কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে চোরাইপথে প্রক্রিয়াজাত চা বিক্রির অভিযোগ ওঠে। এতে চা সম্প্রসারণে আগ্রহ হারায় বাগান মালিকরা। তবে জেলা প্রশাসন ও চা বোর্ডের উদ্যোগে সমস্যা নিরসনের পর এখন নতুন স্বপ্নে বাগান মালিকসহ শ্রমিকরা। এদিকে বর্তমান সময়ে মূল্য স্থিতির কারণে নতুন কাঁচা চা পাতার দাম বৃদ্ধির দাবি তাদের।
বাংলাদেশ চা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয় পঞ্চগড়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ খান জানান, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে প্রুনিং বা ছাঁটাই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এতে করে যেমন নতুন ভাবে তৈরি হবে চা পাতে তেমনি আগামী দুমাস পরিচর্যায় চায়ের গুণগত মান নিশ্চিতে ভূমিকা পালন করবে।
জানা গেছে, ২০০০ সালে পঞ্চগড়ে সমতল ভূমিতে চা চাষ শুরু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, দিনাজপুর ও নীলফামারীতে ১০ হাজার একর জমিতে চা উৎপাদন শুরু হয়। এদিকে গেল বছরে প্রচণ্ড খরতাপ ও বাগান মালিকদের চা পাতার ন্যায্য মূল্য না দেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে চলতি মৌসুমে গেল বারের চেয়ে ৩৪ লাখ কেজি চা কম উৎপাদন হয়েছে। অপরদিকে ১ হাজার একর জমির চা বাগানে নষ্ট করেছে বাগান মালিকরা। এদিকে নতুন মৌসুমের সঙ্গে সব সংকট নিরসনসহ চাষিদের উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছে চা বোর্ড ও জেলা প্রশাসন।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড়ের চা শিল্পকে আরও গতিশীল করার জন্য টি সফট মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ও অ্যাপ তৈরি করেছে। যার মাধ্যমে কৃষক থেকে শুরু করে চায়ের অকশনের বায়ার পর্যন্ত চায়ের পরিসংখ্যান সফট্যাওয়ারের মাধ্যমে করা হয়। এ সফট্যাওয়ারে ১৪ দিনের একটি হিসাবে পঞ্চগড় থেকে প্রতিদিন গড়ে ৫৩ হাজার ৬০৪ দশমিক ৭৬ কেজি চা নিলামের জন্য অকশন সেন্টারে পাঠানো হয় বলে জানা গেছে। যার প্রতিদিনের গড় মূল্য ৮৫ লাখ ৭৬ হাজার ৭৬১ টাকা ৯০ পয়সা। যেখানে রাষ্ট্রের গড় প্রতিদিন রাজস্ব আয় হয় ১৩ লাখ ৭২ হাজার ২৮১ দশমিক ৮৯ টাকা।
পঞ্চগড়ের সমতল চা বাগান। ছবি: সংগৃহীত
এদিকে চা চাষিদের অসন্তুষ্টি ও চাষ কমে আসার কারণ হিসেবে দেখা গেছে কারখানার কম্পিটিশন না থাকা। খারাপ কোয়ালিটি এবং চোরাই পথে চা বিক্রির কারণে চাষিরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চাষিরা বলছেন তারা ভালোমানের চা দেয়ার পরেও কারখানা তা ঠিকমতো নিচ্ছে না। তবে মৌসুম শেষে এখন নতুন স্বপ্নে সবাই।
বাগান মালিক ও শ্রমিকরা বলছেন, ‘বিগত বছর গুলোতে আমরা কারখানার নানা চক্রান্তের শিকার হয়েছি। বর্তমান কিছুটা সেই সমস্যা কেটেছে। এখন নতুনভাবে চা বাগানগুলো নিয়ে স্বপ্ন দেখছি। যেহেতু দেশে সব কিছুর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে, আমরা সরকারের কাছে আশা করি নতুন মৌসুমে যাতে আমাদের পাতার ন্যায্য মূল্যসহ মূল্য বৃদ্ধি করা হয়। এজন্য আমরা ভালোমানের পাতা সংগ্রহের জন্য প্রুনিং কাজ শুরু করেছি।’