প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা রবিবার থেকে

সারাদেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে আগামীকাল রবিবার ((৭ ডিসেম্বর) থেকে আবারও শুরু হচ্ছে বার্ষিক পরীক্ষা। গত বৃহষ্পতিবার প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে হঠাৎ প্রাথমিকের শিক্ষক নেতাদের বদলির আদেশের পর শিক্ষার্থীদের ক্ষতির কথা ভেবে এমন সিদ্ধান্ত নেন তারা।

প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের অন্যতম আহ্বায়ক মো. শামছুদ্দিন মাসুদ সমকালকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আমরা রবিবার থেকে পরীক্ষা নেব। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আমাদেরই সন্তান। তাদের ক্ষতি আমরা চাই না। দুই দিন পিছিয়ে গেছে, কিন্তু এতে শিক্ষাজীবন অচল হবে না।

অভিভাবকদের প্রতিক্রিয়া বিষয়ে শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকরা অভিভাবকদের চাপে পড়েছেন। অনেকে উত্তেজিত হয়েছেন। কিন্তু বছরের পড়াশোনা শেষ। পরীক্ষা দুই দিন পর হলে বড় সমস্যা হতো না। তিনি আরও জানান, আন্দোলনের অন্যান্য কর্মসূচি চলমান থাকবে, তবে পরীক্ষাকে আওতামুক্ত রাখা হবে।

সংগঠনের আরেক আহবায়ক মো. মাহবুবর রহমান বলেন, রবিবার থেকে আমরা পরীক্ষা নেব। কর্মবিরতি চলবে, তবে অন্যান্য কর্মসূচি পরীক্ষার পর অব্যাহত থাকবে। বদলি চাকরিরই অংশ। তাই সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের থামানো যাবে না।

প্রসঙ্গত, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের তিন দফা দাবির আন্দোলন চলমান অবস্থায় ভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়েছে আন্দোলনে যুক্ত ৪২ শিক্ষককে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ৪ ডিসেম্বরের আদেশে এ বদলি অনুমোদন দেওয়া হয়।

তালিকায় আন্দোলনের পাঁচ শীর্ষ নেতা খায়রুন নাহার লিপি, মো. শামছুদ্দীন মাসুদ, মো. আবুল কাশেম, মো. মাহবুবর রহমান এবং মো. মনিরুজ্জামান রয়েছেন। সহকারী শিক্ষকদের সবাইকে পার্শ্ববর্তী জেলায় বদলি করায় নিজ জেলায় থাকার সুযোগ তাদের থাকছে না।

তিন দফা দাবি আদায়ে গত ২৭ নভেম্বর থেকে লাগাতার কর্মবিরতি শুরু করেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। এরপর ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া বার্ষিক পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন তারা। ২ ডিসেম্বর বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরু করেন।

শিক্ষকদের এমন কর্মসূচিতে সারাদেশের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটে। কোথাও কোথাও উপজেলা প্রশাসন ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় প্রধান শিক্ষকরা পরীক্ষা নিলেও তাতে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়।

এমন পরিস্থিতিতে দফায় দফায় সরকারি চাকরিবিধি ও ফৌজদারি আইনে আন্দোলনরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ার দেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এরপরও শিক্ষকরা কর্মসূচি অব্যাহত রাখায় শাস্তিমূলক বদলির পথে হাঁটে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। বৃহস্পতিবার শিক্ষকদের আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া চার নেতাসহ কয়েকশো শিক্ষককে রীতি ভেঙে ভিন্ন জেলায় বদলি করা হয়। এরপরই শিক্ষকদের পক্ষ থেকে কর্মসূচি স্থগিতের ঘোষণা এলো।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশে বর্তমানে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে তিন লাখ ৮৪ হাজারের বেশি শিক্ষক কর্মরত। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই সহকারী শিক্ষক।

প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা বর্তমানে দশম গ্রেডে উন্নীত হয়েছেন। তবে সহকারী শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। তারা এ নিয়ে অসন্তুষ্ট। গ্রেড উন্নীতকরণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন তারা।