নীলনদ আর পিরামিডের জন্য মিশর বিখ্যাত হলেও আরও অনেক অজানা বিষয় রয়েছে, যা শুনলে হয়তো আমরা অবাক হয়ে যাই। মিশরীয় ইতিহাস বলতে আমরা নানা রকম শিল্প-সংস্কৃতি আর রাজনৈতিক নানা বিষয় সংক্রান্ত অনেক তথ্য জেনে থাকি। এছাড়া প্রাচীন মিশরে নানা ধরনের উৎসবকে অনেক বেশি প্রাধান্য দেওয়া হতো। ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও রাজার নির্দেশে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হতো বিশেষ করে রাজকীয় অনুষ্ঠানগুলো।
আর এই ধরনের অনুষ্ঠানগুলোতে মানুষ যোগ দেওয়ার জন্য কিংবা অংশগ্রহণ করার জন্য তাদের পোশাক-আশাক নিয়ে যেমন রাজকীয় চিন্তা ভাবনা ছিল তেমনি ছিল তাদের সাজসজ্জা নিয়ে নানান পরিকল্পনা। সেই সাজসজ্জা ছিল চোখে পড়ার মতো।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে তখনকার মিশরীয় নারীদের চেহারায় নাকি বয়সের ছাপ পড়তো না, এমনকি চামড়া ও কুচকাতো না। বয়স মাত্র কিন্তু সৌন্দর্যের পরিবর্তন আসতো না তারা সুন্দরী থাকা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করত।
মিশরীয় নারীদের নেক্রফিলিয়ার আসক্ত গোর খুঁড়ে, রাজপরিবারের শত্রু কিংবা কুরুচিপূর্ণ লোকেদের লালসা থেকে তাদের নিরাপদ রাখতে মৃত্যুর কয়েক দিন পর মমি তৈরি শুরু হতো।
মিশরীয় নারীরা তাদের জীবদ্দশায় রূপচর্চা এবং সৌন্দর্য নিয়ে কোনোভাবে কোনো আপস করেননি। তাদের রূপচর্চায় বিভিন্ন পদ্ধতির সাজানো ছিল প্রাকৃতিক নানা উপকরণ দিয়ে। মিশরীয় নারীরা আজ থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে যে ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতো, তার উপযোগ আজও ফুরিয়ে যায়নি। শুরুতেই কয়েকটি উপাদানের কথা বলা যেতে পারে যেগুলো প্রাচীন মিশরীয় নারীরা তাদের রূপচর্চায় ব্যবহার করেছেন, যেমন তারা মুখের ত্বককে প্রাণবন্ত ও সজীব রাখতে ব্যবহার করেছিলেন মেথি অ্যাভোকাডো ও উটের দুধ। অন্যদিকে শরীরের অপ্রয়োজনীয় লোম দূর করার জন্য ব্যবহার করেছিলেন চিনির মিশ্রণ।
অ্যাভোকাডো পুরা ভর্তার মতো মিশ্রণ তৈরি করে পুরো মুখে ভারী করে প্রলেপের মতো লাগাতেন তারা। চোখের নিচে অ্যাভোকাডো ব্যবহার করতেন। যেন চোখের কালো দাগ দূর হয়। ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে মিশরীয় নারীরা গোসলের পর বাদামের তেল ব্যবহার করতেন। বাদামের তেলে প্রচুর পরিমাণ ন্যাচারাল ফ্যাট এবং ভিটামিন ই থাকে। এর ফলে যেকোনো বয়সের নারী তা ব্যবহার করতে পারতো।
মিশরীয়রা যে ধরনের তেল ব্যবহার করতো, তা বিশেষ ধরনের খেজুর থেকে তৈরি হতো। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বাদাম, নারিকেল এবং প্রকৃতির নানা উৎস থেকে তারা তেল তৈরি করতো। যারা এই তেল তৈরি করতো, তারা খুব সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতো।
এছাড়া মিশরেও নারীরা চুলে মেহেদি ব্যবহার করতো। চুলে মেহেদি ব্যবহার করার ফলে যেমন চুলে একটা আলগা রঙ আসতো, ঠিক তেমনি একটা ন্যাচারাল কন্ডিশনার হতো চুলে।
হয়তোবা বিষয়গুলো অনেকের কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। তবে এটাই সত্যি। প্রাচীন মিশরীয় নিদর্শনের সমাধি থেকে এই ধরনের তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
নিয়মিত গোসল করা বা খুশকি থেকে শরীরকে, শুষ্কতা থেকে শরীরকে বাঁচানোর জন্য এই অভ্যাস করতে বলা হয়েছে। এই ধরনের বিষয়ক মিশরীয় ইতিহাসে পাওয়া যায়।
তারা নানা ধরনের মলম, ক্রিম এবং তেল নিজেরাই তৈরি করে শরীরে মাখতো। তবে সবটাই যে ছিল সৌন্দর্যের জন্য তা নয়। রোদ থেকে নিজেদের বাঁচাতে কিংবা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য এই বিষয়গুলো তারা করে থাকতো।
প্রাচীন মিশরীয়রা রূপচর্চার জন্য কিংবা সুগন্ধি থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রসাধনী প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্রহ করতো। এতে তাদের ত্বক বা শরীরের জন্য কখনোই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়নি।
শারীরিক সুস্থতা থেকে শুরু করে যৌন সক্ষমতা বৃদ্ধি নানা উপকরণ সম্পর্কে ধারণা ছিল মিশরীয়দের। তারা পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি নিজেদের দর্শনীয়ভাবে উপস্থাপন করার জন্য বেশিরভাগ প্রসাধনী ব্যবহার করেছে। তারা ধর্মকর্ম থেকে শুরু করে সামাজিক অনুষ্ঠান প্রতিটি ক্ষেত্রে সাজগোজ করেছে। প্রাচীন মিশরীয়দের ক্ষেত্রে শুধু নারী নয় নারী পুরুষ সবাই সমানভাবে সাজসজ্জা কে গুরুত্ব দিয়েছে।
তবে মিশরীয়রা যে ধরনের প্রসাধনী তৈরি করতো না কেন বা এই ধরনের কাজে যারা নিয়োজিত ছিল, তারা খুব সতর্কতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করতো। কারণ যদি কোনো ভুল হতো বা কোনো নিম্নমানের পণ্য ব্যবহার হতো আর তা যদি মানুষের ক্ষতির কারণ হতো এতে করে যারা এই কাজ করেছে তাদের মৃত্যুদণ্ডের মতো শাস্তি ছিল।