প্রযুক্তিনির্ভরতায় কমছে চাকরি

প্রযুক্তির অগ্রগতির বিপরীতে মানুষের কর্মস্থল সীমিত হয়ে আসছে। বাড়ছে চাকরি হারানোর প্রবণতা! আধুনিক উৎপাদন ব্যবস্থা এখন শ্রম-নির্ভর নয়, বরং প্রযুক্তিনির্ভর। অটোমেশন ও উচ্চ দক্ষতার মেশিন ব্যবহারে আগের চেয়ে অনেক কম সংখ্যক কর্মী নিয়েও একই কাজ করা সম্ভব হচ্ছে।

একসময় কারখানার চাকরি মানেই ছিল ভালো বেতন, স্থায়ী চাকরি, ইউনিয়নের সুরক্ষা এবং ডিগ্রি ছাড়া কর্মসংস্থান। ১৯৮০-এর দশকেও উৎপাদন খাতে কর্মীরা অন্য খাতের তুলনায় গড়ে ১০ শতাংশ বেশি আয় করতেন। কিন্তু এখন এসব সুবিধা প্রায় নেই। কারখানার কাজের বেতন বর্তমানে সেবাখাতের অনানুষঙ্গিক কাজের তুলনায় কম। ইউনিয়নের সদস্য সংখ্যাও এক-চতুর্থাংশ থেকে কমে এক-দশমাংশে নেমে এসেছে।

মার্কিন রাজনীতিকদের মধ্যে এক ধরনের নস্টালজিয়া দেখা যায়—পুরোনো দিনের মতো তাদের কারখানাগুলো আবার কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে, সাধারণ মানুষ সেখানে আগের মতো ভালো বেতনের চাকরি পাবে। সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন থেকে শুরু করে ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত অনেকেই এমন স্বপ্ন দেখান। কিন্তু বাস্তবতা বলছে—কারখানার কাজ আর আগের মতো নেই এবং ভবিষ্যতেও তা ফিরবে না।

আগের চেয়ে উৎপাদন বেশি, শ্রমিক কম
গত কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে কমেছে। কেবল ২০০০-এর দশকেই প্রায় ৬০ লাখ কারখানার চাকরি (ফ্যাক্টরি জব) হারিয়েছে দেশটি। অথচ উৎপাদন কমেনি—বরং ১৯৮০-এর দশকের তুলনায় আজ দেশটি দ্বিগুণ পণ্য উৎপাদন করে।

কোন কোন চাকরির চাহিদা বেশি?
এখনকার দিনে পুরোনো কারখানার চাকরির মতো অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, ভালো আয়, এবং উচ্চ চাহিদাসম্পন্ন কাজগুলো বেশি দেখা যায় নিচের পেশাগুলোতে:

* ইলেকট্রিশিয়ান, মেকানিক, কার্পেন্টার, এইচভিএসি (হিটিং, ভেন্টিলেশন, এয়ারকন্ডিশনিং) টেকনিশিয়ান ইত্যাদি
* মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণকর্মী
* জরুরি সেবা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য (যেমন পুলিশ, দমকলকর্মী)

এসব পেশায় প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মার্কিনি কাজ করছেন। অধিকাংশের ডিগ্রি নেই, বেতন ভালো এবং ইউনিয়ন কাঠামো তুলনামূলকভাবে শক্তিশালী।

সমস্যা একটাই
কারখানা একসময় গোটা শহরের অর্থনীতিকে টেনে তুলতো। যেমন: পিটসবার্গ ছিল ‘স্টিল সিটি’, একরন ছিল ‘রাবার ক্যাপিটাল’। স্কিলড ট্রেডস (উচ্চতর দক্ষতা সম্পন্ন) বা মেরামতের কাজ এখন বেশিরভাগই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে—তাতে একটা শহরের অর্থনীতিকে পাল্টে দেওয়ার মতো প্রভাব পড়ে না।

ভবিষ্যৎ কোথায়?
চলমান প্রবণতা বলছে, নির্মাণ, মেরামত এবং নিরাপত্তা খাতে চাহিদা বাড়বে। তবে সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাবে যেসব খাত, তা হলো: স্বাস্থ্য সহায়তা (হেলথ-কেয়ার সাপোর্ট) এবং ব্যক্তিগত যত্ন খাত (নার্সিং, চাইল্ড কেয়ার)।

এই কাজগুলো সাধারণত নারী-কেন্দ্রিক, বেতন কম, কিন্তু চাহিদা প্রবল। হার্ভার্ডের অর্থনীতিবিদ দানি রডরিকের মতে, এই খাতগুলোতেই উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত—বিশেষত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে।