রাজবাড়ীতে পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের জন্য তৈরি করা হচ্ছে ২০টি আধুনিক ঘর। এসব ঘরের প্রতিটিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে ৩০০ মণ পর্যন্ত। সংরক্ষণাগারের কাজ শেষ হলে কাঙ্খিত দাম পাবেন চাষিরা বলে জানিয়েছেন রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ।
আবুল কালাম আজাদ বলেন, দেশের মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের ১৫ শতাংশই হয় রাজবাড়ীতে। অনুকূল আবহাওয়া ও ফলন ভালো পাওয়ায় প্রতি বছরই বেশি বেশি পেঁয়াজের আবাদ করেন চাষিরা। এ বছর এই জেলা পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে।
পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য সংরক্ষণাগার না থাকায় জেলার কৃষকেরা স্থানীয় পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেন। ফলে সঠিকভাবে সংরক্ষণ না হওয়ায় দেড় থেকে দুই মাস পর নিত্যপ্রয়োজনীয় এই খাদ্য পণ্যটিতে পচন শুরু হয়। তখন কৃষকেরা লোকসান কাটাতে কম দামে পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি করে দেন। তাই কৃষকদের কথা মাথায় রেখে পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের জন্য জেলার কালুখালী উপজেলায় ২০টি আধুনিক ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঘর নির্মাণের কাজ বর্তমানে চলমান রয়েছে।
কালুখালীর কৃষক রমজান শেখ বলেন, ‘আমারা যে টাকা খরচ করে পিজ (পেঁয়াজ) আবাদ করি সেই দামে বিক্রি করতে পারি নে। আমাদের লস যায়। যেই সময় মাঠ থেকে পিজ তুলি তখন বাজারে দাম পাই না। এক বিঘা জমিতে পিজ আবাদে খরচ হয় ৩০-৪০ হাজার টাকা। আর বিক্রি করতে হয় ৩০ হাজার টাকায়। ঘরে যে কয় মাস রাখবো তার উপায় নাই। কারণ ঘরে রাখলে এক দুই মাস পরে পচে যায়, পিজি গাছ জ্বালায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুনতিছি সরকার থেকে পিজ রাখার জন্য ঘর করে দিচ্ছে। ঘর হলিতো আমাদের মত কৃষকদের সুবিধাই হবে। কারণ পিজ ওই ঘরে রেখে সুবিধামত সময়ে বিক্রি করতে পারবো।’
পাংশার কৃষক রজব আলী জানান, আগামী বছরে পেঁয়াজ চাষ করলেও অল্প করবেন। কয়েক বছর হলো লস যাচ্ছে তার। তার বাড়িতে পেঁয়াজ রাখার মতন ব্যবস্থা নেই যে কিছু মজুত করে রাখবেন।
তিনি বলেন, ‘সেদিন শুনলাম কালুখালীতে পেঁয়াজ রাখার ঘর করে দিচ্ছে সরকার। আমাদের এলাকাতেও তো পেঁয়াজ হয় তালি আমাদের এইদিক হবে না ক্যা। আমাদের এইদিক ঘর হলি আমরাও সেই ঘরে পেঁয়াজ রাখতাম। পরে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেশি হলি বেচতাম।’
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, কৃষি বিপণণ অধিদপ্তর পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন ও বিপনন কার্যক্রম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কালুখালী উপজেলায় বিভিন্ন কৃষকের বাড়িতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য আধুনিক ঘর নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। ২০টি ঘরে প্রায় ২৪০ মেট্রিকটণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন কৃষকেরা। প্রতিটি ঘরে ৩০০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। যেসব উপজেলাতে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পর্যায়ক্রমে সে সব উপজেলাতেও ঘর নির্মাণ করা হবে।
তিনি বলেন, রাজবাড়ী জেলায় মোট উৎপাদিত পেঁয়াজের ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায় সংরক্ষণ পদ্ধতি আধুনিকায়ন না হওয়ার কারণে। এতে কৃষকেরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হন। পেঁয়াজ সংরক্ষণ ঘর নির্মাণ হলে কৃষকরা ভবিষতে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবেন এবং তারা লাভবান হবেন এমনটাই আশা করছি।
কালুখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পূণীমা হালদার বলেন, পেঁয়াজ-রসুন সংরক্ষণের ঘর নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। আমি দুইদিন আগে বোয়ালিয়া ইউনিয়নে যাই। নির্মাণাধীন ঘরের কাজ প্রায় শেষ। শুধু ফ্যান আর বিদুৎ সংযোগ বাকি আছে।
তিনি আরও বলেন, সম্ভবত ৫ বা ১০টি কৃষক পরিবার তাদের পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন ঘরগুলোতে। সবাই রাখতে পারবেন না। কারণ প্রতিটা ঘরে ৩০০ মণ পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যাবে। ঘর গুলোর চারপাশ বাঁশ দিয়ে তৈরি,শুধু চালা টিনের। প্রতিটা ঘরে ছয়টা ফ্যান থাকবে। কৃষকরা পেঁয়াজ যতদিন খুশি ততদিন রাখতে পারবেন ওই ঘরগুলোতে। এক্ষেত্রে কৃষকদের শুধু বিদ্যুৎ বিল বহন করতে হবে।