ফল ও সবজি হিসেবে পেঁপে বেশ জনপ্রিয়। শুধু পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য একসময় বাড়ির আঙিনায় চাষ করা হতো ফলটি। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় শ্রীপুরে এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে পেঁপে। উপজেলার সিংগারদিগী গ্রামের আলমাছ মিয়া লাভবান হওয়ায় অনেকেই ঝুঁকছেন পেঁপে চাষে। ইতোমধ্যে তার ভাগ্য বদলে গেছে।
পেঁপে চাষের মধ্যে দিয়ে আলমাছের কৃষিকাজের শুরু আরও আট বছর আগে। শুরুতে ক্ষতির ধাক্কা কাটিয়ে অবশেষে সফলতা এসেছে। এখন শত-সহস্র ফলবতী পেঁপের সৌন্দর্যে হাসছেন শ্রীপুরের বাণিজ্যিকভাবে সফল পেঁপে চাষি আলমাছ।
পেঁপের বৈজ্ঞানিক নাম- Carica papaya, এরা Caricaceae পরিবারের সদস্য। কাঁচা তথা সবুজ অবস্থায় সবজি এবং পাকা অবস্থায় ফল হিসেবে খাওয়া হয়। পেঁপের অনেক ভেষজ গুণও রয়েছে। ইউনানী নাম পাপিতা, আরানড খরবূযা এবং আয়ুর্বেদিক নাম অমৃততুম্বী।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি পেঁপে গাছ। প্রতিটি পেঁপে গাছে ঝুঁলে আছে অসংখ্য পেঁপে। পাঁচ-ছয় ফুট উচ্চতার প্রতিটি গাছেই গুচ্ছাকারে ধরে আছে পেঁপে। যেদিকে চোখ যায় শুধু পেঁপে আর পেঁপে। কয়েকজন শ্রমিক ওখানে নিয়মিতভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
কৃষক আলমাছ মিয়া বলেন, আমি মাসুদ ফিড মিলের মালিক ফজলুল হক ফরাজির কাছ থেকে বর্গা নেওয়া ৬ বিঘা জমিতে এবছর পেঁপে চাষ করেছি। গত বছরও আমি এই জমিতে পেঁপে চাষ করেছি। সে বছর প্রায় ৫ লাখ টাকা পেঁপে বিক্রি করেছি। সব খরচ বাদে প্রায় ৩ লাখ টাকার মতো মুনাফা হয়েছে।
এবছরও আমি একই জমিতে পেঁপে চাষ করেছি। আমার প্রতিটি গাছেই পেঁপে আসতে শুরু করেছে। আশা করছি এবছরও ফলন ভালো হবে। প্রতি কেজি কাঁচা পেঁপে ২৫-৩০ টাকা দরে বিক্রি করা যায় আর পাকা পেঁপে পিস হিসাবে বিক্রি করা হয়। আর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই এগুলো বাজারে বিক্রি করবো।
পেঁপের ভ্যারাইটি সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, আমি এবছর বাংলা ‘ইরি জাত’ দেশীয় প্রজাতির পেঁপে গাছ লাগিয়েছি। এটি একটু লম্বা আকৃতির পেঁপে। এই পেঁপে উন্নত, আকারে বড় এবং খেতে অনেক সুস্বাদু হয়।
তিনি জানান, মাকড়সা ও ছত্রাক ছাড়া পেঁপে বাগানে তেমন কোনো সমস্যা দেখা যায় না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে পুষ্টিমানসমৃদ্ধ পেঁপে চাষে ভাগ্য বদলে ফেলা যায়। পেঁপে চাষে অর্থনৈতিকভাবে সরকারি সহযোগিতা পেলে দেশের অনেক বেকার সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
তিনি মনে করেন, শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি চাষে অগ্রসর হন, তাহলে তারাও লাভবান হবেন।
ব্যবসায়ী ফজলুল হক ফরাজী বলেন, আলমাছ খুবই ভালো ছেলে। সে হঠাৎ করেই মাঠে পেঁপে চাষ শুরু করে সফল হয়েছে। তার চাষ দেখে আমাদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ তৈরি হয়েছে। গ্রামের অনেকেই পেঁপে চাষ করেছে এবং অনেকেই চাষ করার পরিকল্পনা করছে।
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মূয়ীদুল হাসান জানান, শ্রীপুরে প্রায় ৬৮৫ হেক্টর জমিতে পেঁপের চাষ করা হয়েছে। সবজি হিসাবে পেঁপের চাষ শ্রীপুরে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। আমাদের কৃষকেরা পেঁপে চাষের ক্ষেত্রে দুই ধরনের জাত নির্বাচন করে থাকে। একটি হল শাহী জাতের পেঁপে আর অন্যটি রেডলেডি।
রেডলেডি পেঁপে হলো থাইল্যান্ডি জাতের পেঁপে, এই পেঁপে পাকা অবস্থায় একটু শক্ত এবং খেতে সু-স্বাদু হয়। অপরটি হলো আমাদের দেশীয় পেঁপে, শাহী জাতের পেঁপে। এই পেঁপে পাকা অবস্থায় নরম হয় এবং সু-স্বাদু হয়। আমাদের শ্রীপুরের উৎপাদিত পেঁপে ইউরোপ ও মধ্যে প্রাচ্যের প্রায় ১৬/১৭টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।