পিতা-মাতার অবাধ্যতা এবং এর পরিণতি

 পিতা-মাতার অবাধ্যতা এবং এর পরিণতি
 পিতা-মাতার অবাধ্যতা এবং এর পরিণতি

 পিতা-মাতার অবাধ্যতা এবং এর পরিণতি

পিতা-মাতার মর্যাদা ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং তাদের প্রতি সদ্ব্যবহার নিশ্চিতভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ। কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা অনুসারে, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তানের ইবাদত আল্লাহ কবুল করেন না। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য পিতা-মাতাকে সন্তুষ্ট করা অপরিহার্য, এবং সেই সন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত থাকে দুনিয়া ও পরকালে সফলতা।

পিতা-মাতার মর্যাদা কোরআন ও হাদিসে

কোরআন মজিদে পিতা-মাতার প্রতি সম্মান ও কর্তব্যের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা সুরা লোকমানে বলেছেন, “আমার কৃতজ্ঞতা এবং তোমার পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা আদায় করো।” (সুরা লোকমান: ১৪)

এছাড়া সুরা বনি ইসরাইলের ২৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের বিরক্তিসূচক কিছু বলো না এবং তাদেরকে ভৎর্সনা করো না।” (সুরা বনি ইসরাইল: ২৩)

এমনকি নবী করিম (সা.) পিতা-মাতার প্রতি অবাধ্যদের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, “পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি জান্নাতের হাওয়ার পরশটুকুও পাবে না।” (তাবারানি, জামে সগির)

পিতা-মাতার অবাধ্যতার পরিণতি

পিতা-মাতার অবাধ্যতা এমন একটি গোনাহ, যার শাস্তি আল্লাহ একেবারে দুনিয়াতেই দেন। হজরত আবু বকর (রা.) বলেন, “পিতা-মাতার অবাধ্যতা এমন একটি গোনাহ, যার শাস্তি আল্লাহ দুনিয়াতেই দিয়ে দেন।” (মুসতাদরাকে হাকেম)

একটি হাদিসে বলা হয়েছে, “তিন ব্যক্তি এমন রয়েছে, যাদের ফরজ ও নফল কোনো ইবাদতই আল্লাহ কবুল করেন না। তারা হলোপিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি, উপকার করে খোঁটা দানকারী এবং তাকদিরকে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী।” (কিতাবুস সুন্নাহ)

এছাড়া, নবী করিম (সা.) বলেছেন, “পিতা-মাতার সন্তুষ্টির ওপরই আল্লাহর সন্তুষ্টি আর পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির ওপরই আল্লাহর অসন্তুষ্টি নির্ভর করছে।” (ইবনে মাজাহ)

পিতা-মাতার অবাধ্যতার বিভিন্ন রূপ

পিতা-মাতার অবাধ্যতা নানা রূপে প্রকাশ পায়। কিছু সাধারণ উদাহরণ হলো-

নিজেকে পিতা-মাতার চেয়ে বড় মনে করা– পিতা-মাতার তুলনায় নিজের শিক্ষা, সম্মান, বা সম্পদকে বড় মনে করা।

পিতা-মাতাকে নিঃস্ব অবস্থায় ফেলে রাখা– পিতা-মাতাকে সাহায্য না করা এবং তাদের সাহায্যের জন্য অন্যের দ্বারে দ্বারে হাত পাততে বাধ্য করা।

পরিবারের সদস্যদের অগ্রাধিকার দেওয়া-বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী-সন্তান বা নিজের প্রয়োজনকে পিতা-মাতার ওপর অগ্রাধিকার দেওয়া।

পিতা-মাতার প্রতি অসম্মানজনক শব্দ ব্যবহার করা- নাম ধরে ডাকা বা এমন শব্দ ব্যবহার করা যা তাদের মর্যাদাহানির ইঙ্গিত দেয়।

ধমকানোর সুরে কথা বলা-পিতা-মাতার প্রতি রূঢ় ও অসম্মানজনক আচরণ।

অব্যবহার ও অবহেলা- শারীরিক বা মানসিকভাবে তাদের প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা, বিশেষত বৃদ্ধ বয়সে।

পরিণতি ও আল্লাহর সন্তুষ্টি

পিতা-মাতার অবাধ্যতার কারণে যে ফলাফল সৃষ্টি হয় তা শুধু দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং পরকালে আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। হাদিসে এসেছে, “পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (ইবনে হিব্বান)

 

পিতা-মাতার সেবা, সম্মান এবং তাদের সন্তুষ্টি অর্জন আল্লাহর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে, পিতা-মাতার প্রতি খোশমেজাজ এবং তাদের প্রতি অঙ্গীকার আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ। তাই, আমাদের সকলের উচিত পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা এবং তাদের সুখ-দুঃখে পাশে দাঁড়ানো, যাতে দুনিয়া ও পরকালে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারি।

Comments (0)
Add Comment