পারমাণবিক বোমা হামলা থেকে রক্ষা নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ভ্রাম্যমাণ আশ্রয়কেন্দ্র (মোবাইল শেল্টার) নির্মাণ করছে রাশিয়া। পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটলে এর তেজস্ক্রিয়তা থেকে ৪৮ ঘণ্টা সুরক্ষা দেবে এই মোবাইল শেল্টার। এর মধ্য দিয়ে রাশিয়া আসন্ন পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর কারণ হচ্ছে, সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে আমেরিকার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভেতরে হামলার অনুমতি দিয়েছেন। এর জবাবে রাশিয়াও দ্রুত তার পারমাণবিক নীতি বদল করেছে। বলেছে, কোনো পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশের (যেমন যুক্তরাষ্ট্র) ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালানো হলে এর জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে রাশিয়া। এরই মধ্যে গতকাল মঙ্গলবার ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার ভেতরে হামলা চালিয়েছে, যদিও তা ভূপাতিত করেছে মস্কো। এর মধ্যেই রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র থেকে নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে মোবাইল শেল্টার নির্মাণ করার খবর এল। বার্তা সংস্থা রয়টার্স, নিউইয়র্ক পোস্টসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম এই খবর প্রকাশ করেছে।
এ সব প্রতিবেদনে বলা হয়, পারমাণবিক বোমা হামলাজনিত শকওয়েভ ও তেজস্ক্রিয়তাসহ নানা ধরনের হুমকি থেকে সুরক্ষার জন্য মোবাইল বোম্ব শেল্টার নির্মাণ শুরু করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার জরুরিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ইনস্টিটিউট বলেছে, ‘কেইউবি–এম’ নামের এসব আশ্রয়কেন্দ্র পারমাণবিক বোমা হামলা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয় থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য সুরক্ষা দিতে পারে। এমন আশঙ্কা করছে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনকে শায়েস্তা করার জন্য পারমাণবিক হামলা চালায়, তাহলে ইউক্রেনও তার মিত্রদের সহায়তায় রাশিয়ার ওপর পাল্টা পারমাণবিক হামলা চালাতে পারে, যদি ন্যাটো এর অনুমোদন দেয়। সেক্ষেত্রে পারমাণবিক যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশাঙ্কা দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, মোবাইল বোম্ব শেল্টারগুলো যে কোনো ধরনের বিস্ফোরণ ও প্রচলিত অস্ত্রের আঘাত, ভবন থেকে নেমে আসা ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া এবং বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্রব্য ও অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব থেকে সুরক্ষা দেবে। কেইউবি–এম’ দেখতে জাহাজে পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত মজবুত কনটেইনারের মতো। এর দুটি মডিউল রয়েছে। একটি কক্ষে ৫৪ জন আশ্রয় নিতে পারবেন। অন্যটি কারিগরি ব্লক হিসেবে ব্যবহারের জন্য। প্রয়োজনে এক একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আরও মডিউল যুক্ত করা যাবে। তবে রাশিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে সহসাই কোনো সংকটের জন্য এই আশ্রয়কেন্দ্রগুলো নির্মাণ করা হচ্চে না। তারপরও আশঙ্কা করছে মানুষের মনে।
রুশ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে এমন আশ্রয়কেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরুর সঙ্গে বর্তমান কোনো সংকটের সম্পর্ক নেই। তবে অতিসম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে রাশিয়ায় হামলা চালানোর ক্ষেত্রে দেশটিকে দেওয়া দূরপাল্লার মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন। বাইডেনের এ সিদ্ধান্তকে বেপরোয়া আখ্যা দিয়ে ক্রেমলিন বলেছে, যদি সত্যি মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় হামলা চালানো হয়, তবে এর যথোপযুক্ত জবাব দেবে মস্কো।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ভ্রাম্যমাণ এসব আশ্রয়কেন্দ্র নানাবিধ কাজের উপযোগী করে নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলো লোকজনকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মানবসৃষ্ট দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি থেকে সুরক্ষা দিতে পারবে। নাগরিকদের নিরাপত্তায় এটিকে একধাপ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে উল্লেখ করেছে ইনস্টিটিউট।
ইনস্টিটিউট বলেছে, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সহজেই ট্রাকে পরিবহনের উপযোগী এবং এতে পানি সরবরাহের সংযোগ দেওয়া সম্ভব। রাশিয়ার বিস্তীর্ণ বরাফাচ্ছাদিত এলাকাতেও স্থাপন করা যাবে এসব আশ্রয়কেন্দ্র।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে প্রথমবারের মতো গতকাল রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের সহস্রতম দিনে এ হামলা চালানো হয়। এমন হামলা চালানো হলে পরমাণু অস্ত্র দিয়ে পাল্টা জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়ে রেখেছে দেশটি। তাই গতকালের এ হামলার পর ইউক্রেন যুদ্ধ আরও সংঘাতের দিকে মোড় নিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, গতকাল বিকেলে রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক এলাকায় এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা ব্যবহার করে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইউক্রেন। সেগুলোর সব কটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার আগেই ধ্বংস করা হয়। তবে ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষের আঘাতে ওই এলাকায় একটি সামরিক স্থাপনায় আগুন ধরে যায়। এতে কেউ হতাহত হননি।
রুশ মন্ত্রণালয়ের এ বক্তব্যের আগে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা রাশিয়ার ব্রিয়ানস্ক এলাকায় একটি গোলাবারুদের গুদামে হামলা চালিয়েছে। এলাকাটি রুশ সীমান্ত থেকে ১০০ কিলোমিটার ভেতরে। হামলার পর ১২টি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
ওয়াশিংটনের অনুমতির পর ইউক্রেন যে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালাতে পারে, সে আশঙ্কা আগেই করছিল রাশিয়া। সে অনুযায়ী, গতকালই নিজেদের পরমাণুনীতিতে পরিবর্তন এনেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, পারমাণবিক শক্তিধর কোনো দেশের সমর্থন নিয়ে রাশিয়ায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হলে পাল্টা জবাবে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারবে মস্কো। শুধু তা–ই নয়, কোনো জোটের সদস্য দেশ যদি রাশিয়ার বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালায়, তাহলে পুরো জোটই এই আগ্রাসন চালিয়েছে বলে বিবেচনা করতে পারবে ক্রেমলিন।
৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী জানুয়ারিতে তাঁর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করার মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে কিয়েভকে মার্কিন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ওই সবুজ সংকেত দেন বাইডেন।