পাকিস্তানে এক ব্যক্তির গাড়ির সংগ্রহ সত্যি নজর কাড়ার মতো। তিনি সেই সব গাড়ির ইতিহাস ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে মিউজিয়াম খুলতে চান।
পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে এমন গাড়ির সংগ্রহ আর নেই। সে বিষয়ে রাজা মুজাহিদ জাফরের আবেগের কোনো সীমা নেই। পপ কালচার জগতের রত্ন থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক যান নিয়ে তার ৪০টি গাড়ির সংগ্রহ সত্যি অনবদ্য।
জাফর রাওয়ালপিণ্ডি শহরের এক ধনী পরিবারের সদস্য। রিয়েল এস্টেট বা আবাসন ব্যবসার সাথে তিনি যুক্ত। তিনি নিজে অবশ্য কৃষিকাজ, গবাদি পশুপালন ও মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকেন।
বালক হিসেবেই তিনি একবার এক ক্লাসিক গাড়ি টুকরো করার কাজ দেখেছিলেন। চকমকে ধাতুর অংশ তার কাছে সে সেময়ে অপ্রতিরোধ্য মনে হয়েছিল। তখন থেকেই পুরানো গাড়ির প্রতি তার টান সৃষ্টি হয়।
রাজা বলেন, ‘আমার বয়স তখন প্রায় ২০। ওয়াল্সলে নামের একটি গাড়ি কিনেছিলাম। সেটা ব্রিটেনে তৈরি। আমি সেটিকে রিস্টোর করলাম। তারপর ১৯৮৫-৮৬ সাল থেকে আমি একের পর এক গাড়ির হাল ফেরানোর কাজ শুরু করলাম। এখনো আমি গাড়ি নিয়ে সেই কাজ করে চলেছি।’
ইসলামাবাদে জাফরের প্রাসাদের মতো বাসভবনের এক অংশে তার আদরের যন্ত্রগুলো রাখা রয়েছে। তার মালিকানার সব ভিন্টেজ কার পাকিস্তানেই কেনা। সেগুলো নানা পর্যায়ে বেহাল অবস্থায় ছিল। তিনি অনেক পরিশ্রম করে সেগুলোকে আবার আগের গৌরবে ফিরিয়ে আনেন। তবে যন্ত্রাংশের সন্ধান পাওয়া খুবই কঠিন। আমেরিকা বা ইউরোপ থেকে বেশিভাগ যন্ত্রাংশ আনাতে হয়।
রাজা মুজাহিদ জাফর বলেন, ‘আমি যখন গাড়ি জোগাড় করা শুরু করলাম, তখন ভাবিনি যে একদিন আমার এত বড় আকারের সংগ্রহ হবে। সেই পর্যায়ে পৌঁছতে ৩৪ থেকে ৩৫ বছর লেগেছিল।’
নিজের সংগ্রহ জনসাধারণের সামনে তুলে ধরতে জাফর এখন স্থানী কর্তৃপক্ষের কাছে গাড়ি মিউজিয়াম খোলার বিষয়ে সহায়তা চেয়েছেন।
রাজা বলেন, ‘আমি সেই মিউজিয়ামকে এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অংশ করতে চাই, যাতে পুরো পাকিস্তান থেকে ছাত্রছাত্রীরা যখন সেখানে আসবে, তখন তাদের গাড়ি সৃষ্টি থেকে শুরু করে বর্তমান অবস্থায় উন্নতির বিষয়ে জানাতে পারি। প্রথম দিন থেকেই টাকা উপার্জন, বড়াই করা বা এই সব গাড়ির পেছনে বাড়তি অর্থ ঢালা আমার লক্ষ্য ছিল না। আমি ভালোবাসা দিয়ে আবার সেগুলোর হাল ফিরিয়েছিলাম এবং সেই কাজে যতটা সম্ভব মূল যন্ত্রাংশ ব্যবহার করেছি।’
তার সংগ্রহের মধ্যে ১৯৫৯ সালের পেজো ২০৩ মডেলও রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সেটিই ছিল কোম্পানির প্রথম গাড়ি। আর আছে রোল্স রয়েস সিলভার শ্যাডো। জেমস বন্ড চলচ্চিত্রের দৌলতে এই গাড়ি জনপ্রিয় হয়ে ওঠা। মোহাম্মদ আলির মতো বিখ্যাত মানুষও সেই মডেল পছন্দ করতেন।
উইম্বলডন হোয়াইট ফোর্ড মুস্ট্যাং মডেলও জাফরের সংগ্রহে রয়েছে। গোল্ডফিঙ্গার চলচ্চিত্রে বন্ডের নায়িকা তানিয়া ম্যালেট সেই গাড়ির জনপ্রিয়তা বাড়িয়ে দেন। তবে বুলিট চলচ্চিত্রে সর্বকালের অন্যতম সেরা কার চেজ দৃশ্যে স্টিভ ম্যাককুইনের কারণে গাড়িটি অমর হয়ে ওঠে।
তবে জাফরের গাড়ির সংগ্রহের সেরা মুকুট হলো মার্সিডিজ ১৭০ভি মডেল। সেটিই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে সবচেয়ে জনপ্রিয় মার্সিডিজ মডেল ছিল। সেটির দৌলতেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্র্যান্ড হিসেবে মার্সিডিজ আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে পেরেছিল।
রাজা বলেন, ‘আমি কখনোই গাড়ির মূল্য ও সেটি আবার বিক্রি করার ভাবনা নিয়ে গাড়ি সংগ্রহ করি না। আমি কখনোই গাড়ি বিক্রির চেষ্টা করি না। ইহ-জগতে আর না থাকলে হয়তো আমার সন্তান বা নাতিনাতনিরা সেগুলো বিক্রি করবে। কিন্তু আমার কোনো গাড়ি বিক্রি করার ইচ্ছে নেই।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে