‘পত্রিকার ক্রোড়পত্র অর্থহীন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে’

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেছেন, পত্রিকার ক্রোড়পত্রে প্রতিবছর মন্ত্রণালয় থেকে অনেক অর্থ ব্যয় করা হয়। তবে সেটি কোনো কাজে লাগে না। কারণ, যারা পত্রিকা পড়েন তারা ক্রোড়পত্র উলটে অন্য পাতায় চলে যান। ফলে ক্রোড়পত্রটা একটা অর্থহীন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় জাদুঘরের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ‘জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ২০২৫’ উপলক্ষে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর আয়োজিত আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন তিনি।

ফারুকী বলেন, ‘আমাদের স্কুলগুলোতে লাইব্রেরির সংখ্যা কমে যাচ্ছে, যা আছে অধিকাংশ সচল না অথবা বেশির ভাগ সময় খোলা হয় না কিংবা লাইব্রেরিয়ান পদ শূন্য। আরও নানান সমস্যা দেখা যায়। যদিও এটা আমাদের মন্ত্রণালয়ের বিষয় না, কিন্তু অনেকগুলো বিষয় একটির ওপর আরেকটি চলে আসে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কী করছে, তার প্রতিক্রিয়া সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ভোগ করতে হয়। একই ব্যাপার ঘটে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের কাজে। ফলে এ বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয় কিংবা যোগাযোগ থাকা প্রয়োজন। যাতে করে আমাদের লাইব্রেরি ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড স্কুলগুলোতে যথাযথভাবে চলতে পারে।’

উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী আরও বলেন, ‘প্রতিবছর ক্রোড়পত্রে মন্ত্রণালয় থেকে অনেক অর্থ ব্যয় করা হয়, অর্থ ব্যয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু, এটা কাজে আসতে হবে। আমি নিশ্চিত জানি, এখানে যারা উপস্থিত আছেন, তারা কেউই এটা পড়েননি। যারা পত্রিকা পড়েন, তারা ক্রোড়পত্র উলটে অন্য পাতায় চলে যান। ফলে ক্রোড়পত্রটা একটা অর্থহীন সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।’

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব (রুটিন দায়িত্ব) মফিদুর রহমান এতে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো. লতিফুল ইসলাম শিবলী, গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মনীষ চাকমা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাফিজা শ্যামা, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক আফসানা বেগমসহ প্রমুখ।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘প্রমথ চৌধুরী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লাইব্রেরি বিষয়ে জোর দিতেন, সেই দৃষ্টিভঙ্গি হয়তো এখন প্রধান নয়। তবে আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা বাংলাদেশে সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লাইব্রেরির একটা জাল গড়ে তুলতে পারিনি। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। এমনকি আমাদের যা কিছু ছিল, আমরা তাও হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের স্কুলে চমৎকার পাঠাগার ছিল, আমরা তা হারিয়ে ফেলেছি।’

প্রবন্ধকার অধ্যাপক সাইফুল আলম তার বক্তব্যে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আদর্শ লাইব্রেরির রূপরেখা তুলে ধরেন। তিনি আধুনিক প্রযুক্তি ও ই-রিসোর্স সমৃদ্ধ লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে মফিদুর রহমান বলেন, ‘চলতি বছরের জুন মাসের মধ্যেই নির্মাণাধীন নতুন জাতীয় গ্রন্থাগার উদ্বোধন করার চেষ্টায় আছি আমরা। এই লাইব্রেরির দুই ভাগের এক ভাগকে ই-লাইব্রেরি বানানো হবে। যেহেতু বর্তমান প্রজন্মের তথ্যপ্রযুক্তির দিকে ঝোঁক বেশি। আমরা চাই তারা যেন হার্ডকপির পাশাপাশি সফট কপি আকারেও সেগুলো পায়। এ ছাড়া ঢাকা ও ঢাকার বাইরে যেসব পাবলিক লাইব্রেরি আছে, সেগুলোতেও আমরা এই পদ্ধতি যুক্ত করছি।’

আলোচনা সভা শেষে গ্রন্থাগার দিবস উপলক্ষে আয়োজিত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা। জাতীয় গ্রন্থাগার দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘সমৃদ্ধ হোক গ্রন্থাগার, এই আমাদের অঙ্গীকার’।

Comments (0)
Add Comment