ঈদুল আজহার ছুটিতে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে যারা রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন বা নিচ্ছেন, তাদের ৩৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় আহত হয়েছেন। হাসপাতালটির রোগী নিবন্ধন খাতার তথ্য বিশ্লেষণ করে এ পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও কার্যকর নজরদারি না থাকায় এ পরিস্থিতি আরো জটিল হচ্ছে।
তথ্য বলছে, ঈদুল আজহার ১০ দিনের ছুটিতে পঙ্গু হাসপাতালে ২ হাজার ৫৬ জন চিকিৎসা নিয়েছেন।
এর মধ্যে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে ৬৪৬ জনকে। তাদের মধ্যে ২৩৮ জন (৩৬ দশমিক ৮৪) ব্যাটারিচালিত রিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। এছাড়া বাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানের মতো চার চাকার যানবাহন দুর্ঘটনায় আহত হন ১৫৭ (২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ) জন এবং ১২৭ (১৯ দশমিক ৬৫) জন আহত হয়েছেন মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়।
গত ঈদুল ফিতরে ছুটির চার দিনে (৩০ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল) রাজধানীর দুটি ও ঢাকার বাইরে আট বিভাগীয় শহরের আটটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, রোগীদের ৩২ দশমিক ২৭ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়, ৩২ দশমিক ১০ শতাংশ অটোরিকশায় এবং ১০ দশমিক ১১ শতাংশ চার চাকার যানে দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।
হাসপাতালে আসা ২৫ দশমিক ৫০ শতাংশ আহত রোগীর দুর্ঘটনার কারণ নিবন্ধন খাতায় উল্লেখ করা হয়নি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য বলছে, এবারের ঈদে দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে মোটরসাইকেল। ১৩৪ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত হয়েছেন। ঈদযাত্রায় ৩৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
ঈদযাত্রায় নিহতের ৬১ জন চালক, ৫০ পরিবহন শ্রমিক, ৫৮ পথচারী, ৪০ নারী ও ৩০ শিশু। তবে এই সংগঠন আলাদা করে ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনার কোনো তথ্য দেয়নি।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, এবারের ঈদে দুর্ঘটনায় সড়ক-মহাসড়কে মোটরসাইকেল-ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচলসহ ৯ কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। দুর্ঘটনা রোধে মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা আমদানি বন্ধ করা, মহাসড়কে আলাদা সার্ভিস লেন নির্মাণসহ নানা সুপরিশ করা হয়েছে।
পঙ্গু হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায় জরুরি বিভাগে রোগী ও স্বজনের ভিড়।হাসপাতালের সিঁড়ি থেকে বারান্দা, ওয়ার্ডের কোণে হুইলচেয়ারে বসে, বিছানায় শুয়ে কিংবা গামছা দিয়ে হাত-পা ঝুলিয়ে রাখতে দেখা যায় দুর্ঘটনায় আহতদের।
পঙ্গু হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আবুল কেনান বলেন, আহতদের সেবা নিশ্চিত করতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে। ১৫ চিকিৎসক দিয়ে জরুরি ও বহির্বিভাগ পরিচালনা করা হচ্ছে।
পঙ্গু হাসপাতাল সূত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ রোগী আসে জরুরি বিভাগে, যার মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত। সবচেয়ে বেশি আসে অটোরিকশায় দুর্ঘটনার রোগী। এ ছাড়া ভবন থেকে পড়ে যাওয়া, দগ্ধ হয়ে হাড়ের ক্ষয় এবং শিল্প দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যাও কম নয়।
অধ্যাপক ডা. মো. আবুল কেনান বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনায় আহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। অনেকে পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন, অনেকের আবার দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হচ্ছে। এবারের ঈদের ছুটিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ৬৪৬ জনের মধ্যে ৫০৮ জনের একাধিকবার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়েছে। এখনও ১৫১ জন ভর্তি রয়েছেন। অনেকের হাত-পা হারাতে হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা প্রয়োজন। শুধু আইন করে বা কিছুদিন অভিযান চালিয়ে সমাধান হবে না। টেকসই সমাধানের জন্য সিটি করপোরেশন, বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ দরকার।