নিকলাস- যার তুলির আঁচরে ফুটে ওঠে নোবেলজয়ীদের মুখাবয়ব

প্রতি বছর অক্টোবর এলেই বিশ্বজুড়ে নোবেল পুরস্কার ঘোষণার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ সময়টাতে কিছুটা ব্যস্ত হয়ে পড়েন সুইডিশ শিল্পী নিকলাস এলমেহেড। তার আঁকা সোনালি ছোঁয়ায় আঁকা মুখাবয়বগুলো এখন নোবেল ঘোষণার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এ উদ্যোগ শুরু হয়েছিল একেবারেই হঠাৎ করে, সমস্যা সমাধান করতে গিয়ে।

২০১২ সালের আগে নোবেলজয়ীদের নাম ঘোষণার সময় সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল ভালো মানের ছবি পাওয়া। সেই সময় নিকলাস ফাউন্ডেশনের একজন শিল্পী হিসেবে কাজ করতেন। একদিন তিনি মার্কার দিয়েই নোবেল পাওয়া ব্যক্তিদের মুখের স্কেচ আঁকেন। উদ্দেশ্য ছিল, শুধু ঘোষণার সময় ভিজ্যুয়াল তৈরি করা। তবে হাতে আঁকা ছবিগুলো গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর বোঝা যায়, এটা শুধু সমাধান নয়, এক নতুন পথের সূচনা।

শুরুর দুই বছর নিকলাসের আঁকা ছবিগুলো ছিল বেশ সাধারণ। কিন্তু ধীরে ধীরে সেগুলো গণমাধ্যমের নজরে আসতে থাকে। ২০১৪ সালে নোবেল কমিটি সিদ্ধান্ত নেয়, নিকলাসের আঁকা মুখাবয়বই হবে আনুষ্ঠানিক ছবি। তখনই তৈরি হয় পরিচিত সাদা পটভূমি, কালো রেখা আর সোনালি আভাযুক্ত শৈলী, যা আজ নোবেল ঘোষণার প্রতীক হিসেবে স্বীকৃত।

 

নিকলাসের শিল্পে বিজ্ঞানের ছোঁয়া স্পষ্টভাবেই লক্ষ্য করা যায়। তার দুটি মাস্টার্স ডিগ্রি রয়েছে— একটি কেটিএইচ রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি থেকে, আরেকটি রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব আর্টস থেকে। এ কারণেই ২০১২ সালে তাকে ‘নোবেল মিডিয়া’ (বর্তমান নোবেল প্রাইজ আউটরিচ) এর আর্ট ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তখন তার দায়িত্ব ছিল ঘোষণার সময় ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট তৈরি করা।

অনেকেই ভাবেন তার ছবিতে আসল স্বর্ণ ব্যবহার হয়। নিকলাস জানিয়েছেন, এটা আসল স্বর্ণ নয়, বরং স্বর্ণরঙা পাত। জয়ীদের ছবিতে নতুন ভিজ্যুয়াল পরিচিতি আনতে ২০১৪ সালে নোবেল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তাকে সোনালি রঙ যুক্ত করতে বলা হয়। পাতলা মেটাল ফয়েল, কালো রেখা ও সাদা পটভূমি মিশিয়ে তিনি প্রতিকৃতিগুলোতে শক্তিশালী এক প্রভাব তৈরি করেন।

যদিও প্রতি বছর নোবেল ঘোষণার আগে নিকলাস গোপনে জানেন কারা জয়ী। কিন্তু তার আঁকা প্রতিকৃতি ঘোষণার সঙ্গেই প্রকাশ পায়। এর আগে তিনি কাউকে কিছু বলতে পারেন না। একেকটি মুখাবয়ব আঁকতে তার কয়েক ঘণ্টার বেশি সময় প্রয়োজন হয় না।

নোবেল প্রতিকৃতি আঁকার বাইরে সারা বছর তিনি নানা শিল্পপ্রকল্পে যুক্ত থাকেন। কখনো পপ কালচারের চরিত্র নিয়ে, কখনো কমিক-স্টাইলের চিত্র আঁকেন। শিল্পীর জীবন সহজ নয়, তিনি মনে করেন, বিশ্বজুড়েই প্রতিভাবান শিল্পী আছে, কিন্তু জীবিকা হিসেবে শিল্প নিয়ে টিকে থাকা খুব কঠিন।

নোবেল ঘোষণার পর তার আঁকা মুখাবয়বগুলো ‘গোল্ডেন ওয়াল’ এ ঝুলিয়ে রাখা হয় নোবেল প্রাইজ আউটরিচের সদর দপ্তরে। জনপ্রিয়তা বাড়ায় বিভিন্ন আর্ট স্কুল তাকে ওয়ার্কশপের জন্য আমন্ত্রণ জানায়।

তবে সব চাইতে আশ্চর্যের বিষয় হলো এ সুইডিশ শিল্পী এখনো নিজের প্রতিকৃতি আঁকেননি।

—ফিজিক্স ওয়ার্ল্ড