দোকান-পাট ও ব্যবসা কেন্দ্রগুলো প্রায় সব বন্ধ। রাস্তাঘাটে লোকজন নেই বললেই চলে। মাঝে মাঝে দু-একটা গাড়ি সাইরেন বাজিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে।
এরই মধ্যে মুহুর্মুহু শোনা যাচ্ছে আর্টিলারির রকেট আর বিমান হামলার শব্দ। অধিবাসীদের বেশির ভাগই পালিয়েছে।
এখনও যারা আছে তারা আশ্রয় নিয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ডে তথা মাটির নিচের বাঙ্কারে। ফলে এক ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হয়েছে বিতর্কিত পার্বত্য অঞ্চল নাগারনো-কারাবাখের প্রধান শহর স্টেপানাকার্ট।
এদিকে নাগারনো-কারাবাখের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুদ্ধরত আজারবাইজান ও আর্মেনিয়াকে ইরানের অভ্যন্তরে ক্ষেপণাস্ত্র ও কামানের গোলার আঘাত সম্পর্ক কঠোর হুশিয়ারি দিয়েছে তেহরান।
বৃহস্পতিবার পাঁচ ঘণ্টার ব্যবধানে ইরানের কয়েকটি গ্রামে ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলা আঘাত হানার পর এ হুশিয়ারি দেয় দেশটির কর্তৃপক্ষ।
প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে। উভয়পক্ষে সেনাসদস্যসহ বহু বেসারমিক নাগরিক হতাহত হয়েছে। পাশাপাশি ধ্বংস হয়েছে কোটি কোটি ডলারের সম্পদ ও ঘরবাড়ি।
আর্মেনীয় কর্মকর্তাদের মতে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কারাবাখ সেনাসহ তাদের অন্তত ৬০৪ জন নিহত হয়েছে। সেনা হতাহত বা সামরিক ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত প্রকাশ করেনি আজারবাইজান কর্তৃপক্ষ। তবে তাদের মৃত্যু সংখ্যাও কম নয়।
স্টেপানাকার্টে প্রায় ৫৫ হাজার লোকের বাস। আজারি ও আর্মেনীয় সেনার তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বেশির ভাগ বাসিন্দাই।
আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের পুরনো সংঘাত গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে আবার শুরু হয়। রাশিয়ার মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হলেও লড়াই বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
গত শনিবার যুদ্ধবিরতির পরপরই উভয়পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা-পাল্টা হামলার অভিযোগ করে। উদ্বেগ প্রকাশ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক মহল। চলমান এই যুদ্ধ বন্ধ করতে দুই দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্ক ও রাশিয়ার নেতারা।
আজারবাইজান কর্তৃপক্ষ বলেছে, আর্মেনিয়াই প্রথম যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছিল। সে কারণেই তারা জবাব দিতে বাধ্য হয়েছে।
তাদের আরও দাবি, যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পরে আজারবাইজানের একটি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় আর্মেনিয়া। এতে বহু শিশু অনাথ হয়েছে। আজারবাইজানের দাবি, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আজারবাইজানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গ্যাঞ্জায় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালায় আর্মেনিয়ার সেনা।
আর্মেনিয়া সীমান্ত থেকে প্রায় ২৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গানজা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বিতর্কিত এলাকা নাগোরনো-কারাবাখ থেকে গানজার দূরত্ব প্রায় ৯৭ কিলোমিটার। সেখানে সেই অর্থে আজারবাইজানের কোনো সেনা কাঠামোও নেই।
অভিযোগ রয়েছে, আক্রমণের ক্ষেত্রে আর্মেনিয়া যুদ্ধের সাধারণ নীতিও মানছে না। সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। আজারবাইজান জানিয়েছে, গানজায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত অনেকেই।
যার মধ্যে শিশুও আছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ওই দিনের হামলার পরে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গানজার একটি অংশ। রাতারাতি অনাথ হয়ে গেছে বহু শিশু।
আজারবাইজানের প্রশাসন ওই শিশুদের এখন আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানোর পরিকল্পনা করছে। সংবাদকর্মীদের ওই শিশুরা জানিয়েছে, কীভাবে চোখের সামনে বাবা-মাকে, পরিবারের অন্য সদস্যদের মারা যেতে দেখেছে তারা।
কীভাবে অল্পের জন্য বেঁচে গেছে তারা। সবাই বাঁচেনি। গানজার হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি বহু শিশুও।
আর্মেনিয়া অবশ্য আজারবাইজানের এই দাবি প্রথম থেকেই অস্বীকার করছে। বৃহস্পতিবারও তারা জানিয়েছে, আজারবাইজানের কেবল সেনা কাঠামো লক্ষ্য করেই তারা আক্রমণ চালাচ্ছে।
সাধারণ মানুষ কখনোই তাদের লক্ষ্য নয়। কিন্তু বাস্তবে শুধু গানজা নয়, আজারবাইজানের একাধিক শহরে সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে আর্মেনিয়ার ছোডা রকেট এবং মিসাইলে।
বৃহস্পতিবার আজারবাইজান জানিয়েছিল, আর্মেনিয়ার রকেট ও মিসাইল লঞ্চার প্যাড ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে আজেরি সেনা। ওই লঞ্চার প্যাড থেকেই আজারবাইজানের বিভিন্ন শহরে হামলা চালানো হতো বলে অভিযোগ।
এদিকে আর্মেনিয়ার অভিযোগ, যুদ্ধের নামে নাগারনো-কারাবাখকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে আজারি সেনা। সেখানকার আর্মেনীয় জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে একের পর এক আক্রমণ চালানো হয়েছে।