দুই যুবক রক্তাক্ত, তাদের পা কাঠের তক্তায় আটকে আছে।
তাদের কাছে নির্যাতনকারী জানতে চাইছে, ‘পিডিএফ (পিপলস ডিফেন্স ফোর্স) কি?
রক্তাক্ত দুই যুবক যন্ত্রণায় চিৎকার করে উত্তর দেয়, ‘কুকুর’
এরপর দুই যুবককে মোটা শেকল দিয়ে বেঁধে টেনেহিচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে পায়ের নিচে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। ধোঁয়া ওঠার সাথে সাথে এবং আগুনের শিখা তাদের গ্রাস করে, দুই ব্যক্তি যন্ত্রণায় চিৎকার করে এবং চিৎকার করে – তাদের অকল্পনীয় যন্ত্রণা এবং ভয়াবহতার শেষ মুহূর্তগুলি ভিডিওতে ধারণ করা হয়েছে। নির্যাতনে মারা যাওয়া দুই যুবক হচ্ছে ২১ বছর বয়সী ফোয়ে তে এবং ২০ বছর বয়সী থার হতাং।
দুই যুবক উত্তর-পশ্চিম মিয়ানমারে তাদের পারিবারিক খামার ছেড়ে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পরে একটি স্থানীয় সশস্ত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীতে যোগদান করেছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে শান্তি ও গণতন্ত্র আনার আশায় তারা বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল।
গত বছরের ৭ নভেম্বর সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় তাদের আটক করা হয় এবং কাছের একটি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মিয়ানমারের সেনারা তাদের নির্যাতনের পর হত্যা করে।
সিএনএন ওপেন সোর্স কৌশল ব্যবহার করে ওই ঘটনার ভিডিও এবং ছবি বিশ্লেষণ এবং এক ডজনেরও বেশি সাক্ষী, গ্রামবাসী, প্রতিরোধ যোদ্ধা, পরিবারের সদস্য ও বিশ্লেষকদের বিবরণ ব্যবহার করে ঘটনার একটি টাইমলাইন তৈরি করেছে। এইসব বিবরণ এবং বিশ্লেষণ ক্ষমতাসীন সামরিক বাহিনীকে হত্যার জন্য দায়ী হিসেবে নির্দেশ করে।
দুই তরুণের এই মৃত্যু ছিল ভয়ঙ্কর। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিজেদের দেশের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের যুদ্ধ চালাচ্ছে। মূলত ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য নিজেদের নাগরিককে হত্যা করতে পিছপা হচ্ছে না তারা।
প্রত্যক্ষদর্শী এবং বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, অগ্নিসংযোগ, শিরশ্ছেদ, অঙ্গচ্ছেদ, গ্রামে অগ্নিসংযোগসহ সন্ত্রাসী কৌশল চালিয়ে ও বিমান হামলার মাধ্যমে প্রায় ত্রিশ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করেছে সেনারা। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী দীর্ঘদিন ধরে ভয় ও বর্বরতার মতবাদের মাধ্যমে জনসংখ্যাকে নিয়ন্ত্রণ ও বিভক্ত করার চেষ্টা করছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক সম্প্রতি পরিস্থিতিটিকে ‘একটি অন্তহীন দুঃস্বপ্ন’ বলে অভিহিত করেছেন। তার ভাষ্য দেশটিতে ‘মানুষের জীবনের প্রতি শীতল অবহেলা’ হিসাবে ‘প্রশিক্ষিত সেনারা তাদের নিজস্ব লোকদের বিরুদ্ধে নৃশংস কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।’