গত ২০ ফেব্রুয়ারির পর প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডে কোনো সক্রিয় কভিড-১৯ রোগী নেই। স্বাস্থ্য বিভাগ এমন ঘোষণা দেয়ার দুই ঘণ্টা পরই নিউজিল্যান্ড প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আরডার্ন জানালেন, লকডাউন তুলে নেয়া হচ্ছে এবং সোমবার মধ্যরাত থেকে মানুষজন স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারবে।
সরকারি ও বেসরকারি অনুষ্ঠান, শেষকৃত্য, সামাজিক অনুষ্ঠান, খুচরা দোকানপাট, গণপরিবহন ও অভ্যন্তরীণ যাতায়াতে কোনো বাধা থাকছে না। যদিও সীমান্ত আরো কিছুদিন বন্ধই থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন বলেছেন, নিউজিল্যান্ড ‘নজিরবিহীনভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে ভাইরাসকে ধ্বংস’ করেছে। তবে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, টেকসই ব্যবস্থা না নিলে তার দেশ নিশ্চিতভাবেই আবারো কভিড-১৯ রোগী পাবে।
৪০ বছর বয়সী এ প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সুখবরটি পাওয়ার পরই তিনি কন্যা নেভের সামনে একটু নেচেছেন। তার কথায়, ‘লাউঞ্জে সে আমার নাচ দেখে কিছুটা অবাক হয়েছে, যদিও পরে সেও নেচেছে। মেয়েটি জানে না আমি কী কারণে নেচেছি, কিন্তু সে উপভোগ করেছে।’
লকডাউন উঠে গেলেও দেশটিতে লেভেল-১ সতর্কতা থাকবে। এ নিয়ে জেসিন্ডা, ‘এই মাত্রার সতর্কতায় থাকার সময় আশাকরি আমরা সেরে ওঠার ধারাবাহিকতায় থাকব। হ্যাঁ, আমরা হয়তো নিশ্চিতভাবেই আবারো আক্রান্ত মানুষ পাবো, কিন্তু তার মানে এই নয় যে আমরা ব্যর্থ হয়েছি।’
তিনি যোগ করেন, ‘এখন আমরা নিরাপদেই বিমান ও বাসগুলো পূর্ণ করতে পারব, ক্যাফেতে আরো কিছু টেবিল রাখতে পারব।’
এ নিয়ে নবম দেশ হিসেবে কভিড-১৯ মুক্ত হলো নিউজিল্যান্ড। আর যে আট দেশ কভিড-১৯ থেকে মুক্ত হয়েছে: ফিজি, মন্টেনেগ্রো, ইরিত্রিয়া, পাপুয়া নিউগিনি, সিশেলস, হলি সি, সেন্ট কিট অ্যান্ড নেভিস ও পূর্ব তিমুর।
গত সপ্তাহে কভিড-১৯ থেকে মুক্ত হওয়ার ঘোষণা দেয় প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপদেশ ফিজি। তাদের সর্বশেষ কভিড-১৯ রোগীও সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সোমবার নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীও একই ঘোষণা দেয়ার পর তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ফিজির প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক বাইনিমারামা।
টুইটারে তিনি লিখেছেন, ‘সর্বশেষ কভিড-১৯ রোগী সুস্থ হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে ফিজির সঙ্গে যোগ দেয়ায় জেসিন্ডা আরডার্ন ও নিউজিল্যান্ডকে অভিনন্দন। আশাকরি কভিড-১৯ উত্তর ভবিষ্যতে শিগগিরই দেখা হবে।’
আর কোনো কভিড-১৯ রোগী না থাকার মানে নভেল করোনাভাইরাসকে হারিয়ে দিতে পেরেছে নিউজিল্যান্ড। ঠিক একই সময় দক্ষিণ এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলো কঠিন সময় পার করছে। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে কভিড-১৯ ক্রমেই শেকড় গেড়ে বসেছে। অথচ তাসমান সাগরের পাড়ের দেশ নিউজিল্যান্ডের মানুষ এখন মুক্ত বিহঙ্গের মতো ঘুরে বেড়াবে।
কীভাবে কভিড-১৯ মুক্ত হতে পারল নিউজিল্যান্ড?
প্রথমত খুবই দ্রুত এবং পরিপূর্ণভাবে লকডাউন কার্যকর করে নিউজিল্যান্ড। গত ১৯ মার্চ ৩০ জনেরও কম রোগী থাকার সময়ই দেশটি সীমান্ত পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। এর সাতদিন পরই দেশটি সর্বোচ্চ সতর্কতা হিসেবে পুরোপুরি লকডাউনে চলে যায়।
পাঁচ সপ্তাহের কঠোর লকডাউন শেষে কিছু খাবারের দোকান ও সামান্য কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়। এপ্রিলের শেষ দিকে এসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় শূন্যে নেমে আসে, তখন দেশটি নিষেধাজ্ঞা আরো কিছুটা তুলে নিতে পারে।
আজ ভাইরাসটি দেশ থেকে বিদায় নিয়েছে বলেই আশা করা হচ্ছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আরডার্ন সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, আরো বহুদিন পর্যন্ত সীমান্ত খুলে দেয়া হবে না।
সূত্রঃ বিবিসি