অবশেষে ক্ষমতা হারানোর পথে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। দীর্ঘ ১২ বছর দেশ শাসন করার পর তার ক্ষমতার মসনদে কাঁপন ধরেছে। বিরোধী দলগুলো তার বিরুদ্ধে জোট পাকিয়েছে। এই জোট পার্লামেন্টে আস্থাভোটে যদি টিকে যায়, তাহলে বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সামনে আর কোনো বিকল্প থাকবে না। তাকে বাধ্য হয়ে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে ইয়ামিনা পার্টির নেতা নাফতালি বেনেটের কাছে। আর যদি আস্থা ভোটে বিরোধী জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায় তাহলে ইসরাইল আবার রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়বে। দুই বছরের মধ্যে সেখানে ৫ম বারের মতো পার্লামেন্ট নির্বাচন হবে। এখন সবটাই নির্ভর করছে পার্লামেন্টের ওপর।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
বুধবার স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত ইয়ামিনা পার্টির বেনেট সময় পেয়েছিলেন নতুন সরকার গঠনের জন্য। এ সময়ের মধ্যে শেষ দু’তিনদিন তিনি এবং ইয়েশ আতিদ পার্টির নেতা ইয়াইর লাপিড অন্য দলগুলোর সঙ্গে ম্যারাথন বৈঠক করেন। ফলে আটটি ছোটবড়, ডান-বাম-মধ্যপন্থিদের নিয়ে তারা জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন। চুক্তি হয়েছে নাফতালি বেনেট ও ইয়াইর লাপিডের মধ্যে। সেই চুক্তি অনুযায়ী তারা সরকার গঠন করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতার মেয়াদের অর্ধেক সময় এ পদে থাকবেন প্রথমে নাফতালি বেনেট। বাকি অর্ধেকটা সময় প্রধানমন্ত্রী হবেন ইয়াইর লাপিড। এই শর্তে বুধবার সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই তারা ঘোষণা দিয়েছেন নতুন সরকার গঠনের। বলেছেন, এ জন্য তারা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
তবে নতুন সরকার গঠনের আগে তাদের জোটকে পার্লামেন্টে ভোটের মুখোমুখি হতে হবে। এক বিবৃতিতে লাপিড বলেছেন, তিনি তাদের চুক্তির বিষয়ে প্রেসিডেন্ট রুভেন রিভলিনকে অবহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, আমি তাকে বলেছি, আমাদের সরকার সব ইসরাইলি নাগরিক, যারা ভোট দিয়েছেন বা ভোট দেননি- তাদের সবার সেবায় কাজ করবে। আমাদের সরকার বিরোধীদের প্রতি সম্মান দেখাবে। ইসরাইলি সমাজ ব্যবস্থার সব অংশের সঙ্গে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে ও সংযুক্ত থাকতে ক্ষমতার সবটুকু ব্যবহার করবো।
ওদিকে ইসরাইলি মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যাচ্ছে লাপিড, বেনেট এবং আরব ইসলামিস্ট রাম পার্টির নেতা মানসুর আব্বাস একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করছেন। বহু মানুষ মনে করছেন এমন চুক্তিতে আসা অসম্ভব একটি ব্যাপার। কারণ, এই জোটে এমন সব দলকে নেয়া হয়েছে যাদের মধ্যে আদর্শিক বিস্তর মতবিরোধ আছে। এ বিষয়ে মানসুর আব্বাস সাংবাদিকদের বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত নেয়া খুব কঠিন ছিল। বেশ কিছু বিরোধপূর্ণ ইস্যু ছিল। কিন্তু তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল চুক্তিতে উপনীত হওয়া। তিনি বলেন, এই চুক্তিতে আরব সমাজের সুবিধা পাওয়ার অনেক বিষয় আছে।
প্রেসিডেন্টের কাছে দেয়া নোটে ইয়াইর লাপিড বলেছেন, নাফতালি বেনেটের পাশাপাশি তিনিও দায়িত্ব পালন করে যাবেন। বেনেট প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। এরপর বেনেট ২০২৩ সালের ২৭ শে আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন লাপিডের কাছে। প্রেসিডেন্ট রিভলিন এর প্রেক্ষিতে আস্থা ভোটের জন্য যত দ্রুত সম্ভব পার্লামেন্টের অধিবেশন আহ্বান করেছেন। যদি এই জোট ইসরাইলের পার্লামেন্ট নেসেটের ১২০ আসনে আস্থাভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয় তাহলে সব আয়োজন ব্যর্থ হবে। ফলে দুই বছরের মধ্যে ৫ম বারের মতো আবার সেখানে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে তাদেরকে পেতে হবে কমপক্ষে ৬১ ভোট।
এখন পর্যন্ত যেসব দল এই জোটে আসতে একমত হয়েছে, তারা হলো-
১. ইয়েশ আতিদ পার্টি। তারা মধ্যপন্থি। এর নেতৃত্বে আছেন ইয়াইর লাপিড। নেসেটে তাদের আছে ১৭টি আসন।
২. কাহোল লাভান (ব্লু অ্যান্ড হোয়াইট) দল। তারাও মধ্যপন্থি। এর নেতৃত্বে আছেন বেনি গানটজ। নেসেটে তাদের আসন সংখ্যা ৮।
৩. ইসরাইল বেইতেনু (মধ্য-ডানপন্থি থেকে ডানপন্থি জাতীয়তাবাদী) দল। এর নেতৃত্বে আছেন আভিগডর লিবারম্যান। নেসেটে তাদের আসন সংখ্যা ৭।
৪. লেবার (সোশ্যাল-ডেমোক্রেটিক) পার্টি। এর নেতৃত্বে আছেন মেরাভ মিশেলি। নেসেটে তাদের আসন সংখ্যা ৭।
৫. ইয়ামিনা (ডানপন্থি) দল। এর নেতৃত্বে আছেন নাফতালি বেনেট। নেসেটে তাদের আসন সংখ্যা ৭।
৬. নিউ হোপ (মধ্যডান থেকে ডানপন্থি) দল। এর নেতৃত্বে আছেন গিডিওন সার। এ দলটির নেসেটে আসন আছে ৬টি।
৭. মেরেটজ (বামপন্থি, সোশ্যাল-ডেমোক্রেটিক) পার্টি। এর নেতৃত্বে আছেন নিতজান হোরোউইটজ। নেসেটে তাদের আসন সংখ্যা ৬।
৮. রাম (আরব ইসলামিক) পার্টি। এর নেতৃত্বে আছেন মানসুর আব্বাস। নেসেটে তাদের আসন সংখ্যা ৪।
এই আটটি দলের সমন্বয়ে গড়ে উঠা জোটকে যদি সরকার গঠন করতে হয় তাহলে পার্লামেন্টে আস্থাভোটে তাদেরকে কমপক্ষে ৬১টি ভোট পেতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে বুধবার তেলআবিবের কাছে একটি হোটেলে বুধবার ম্যারাথন বৈঠক করেন দলগুলোরার নেতারা। এতে সব সরকম এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়। তবে তাদের এ প্রচেষ্টাকে শতাব্দীর মধ্যে বড় প্রতারণা বলে অভিহিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, এর ফলে রাষ্ট্র হিসেবে ইসরাইল এবং এর জনগণ বিপন্ন হবেন।