জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ফেব্রুয়ারিতে আসছে নতুন রাজনৈতিক দল। এ লক্ষ্যে সাংগঠনিক তৎপরতা চালাচ্ছেন জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণরা। তারা বলছেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতাকে সামনে রেখে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের এক দফা ‘ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ বাস্তবায়নে কাজ করতে চান তারা।
বিজয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, যারা ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করেছিল এবং যারা দেশকে নতুনভাবে সাজাতে চায়, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি মুক্ত করে দেশকে নতুন জায়গায় নিয়ে যেতে চায়, যারা দেশকে দক্ষিণ এশিয়া ও বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপন করতে চায়, তাদের সংগঠিত করে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আগামী এক দুই মাসের মধ্যে নতুন দল উপহার দেবে।
এদিকে, দলীয় সূত্র বলছে, বাংলাদেশ প্রশ্নে কোনো ছাড় দিতে রাজি নয় তরুণরা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাই ৩০০ আসনেই তরুণদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে চায় তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি এই দুই প্ল্যাটফরম থেকে যারা নতুন রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে আগ্রহী মূলত তাদের নিয়ে দল গঠিত হবে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের সাবেক নেতা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হবে দলে। নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতারা দলের সঙ্গে সরাসরি জড়িত হবেন না। তবে তাঁদের মধ্যে কয়েকজন নির্বাচনে অংশ নেবেন। এই দুটি প্ল্যাটফরমকে বিলুপ্ত না করে কাজে লাগানো হবে ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কেন্দ্রীয় নেতারা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দলীয় ম্যানিফেস্টো তৈরি এবং সাংগঠনিক কাঠামোর বিস্তৃতি ও পুনর্গঠন কার্যক্রম নিয়ে। চলতি মাসেই সারা দেশে থানা পর্যায়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির কমিটি গঠনের লক্ষ্যে কাজ চলছে। ফেব্রুয়ারির মধ্যে সম্পন্ন হবে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনও সাংগঠনিক কাজে তৎপর রয়েছে। তারাও জেলা পর্যায়ে কমিটি দেওয়া শুরু করেছে।
কমিটি গঠনের পাশাপাশি দুটি সংগঠনের নেতারা জাতীয় বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় নিয়মিত বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশ নিচ্ছেন। পাশাপাশি সংগঠন দুটির প্রতিনিধিরা বিভিন্ন জেলা সফর করছেন। এর মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটি বিভিন্ন জেলায় মতবিনিময় সভা করছে। পাশাপাশি দুই সংগঠনই নিজেদের সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করেছে। দুটি সংগঠনের কার্যক্রম এখন পরিচালিত হচ্ছে রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ ট্রেড সেন্টারের পৃথক কার্যালয় থেকে।
জাতীয় নাগরিক কমিটিতে দুই দফায় সদস্য বেড়ে এখন ১০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ ৯ ডিসেম্বর সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করে আটজনকে যুগ্ম আহ্বায়ক, আটজনকে যুগ্ম সদস্যসচিব, পাঁচজনকে সহমুখপাত্র, চারজনকে যুগ্ম মুখ্য সংগঠক এবং ১৪ জনকে সংগঠক করা হয়। পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা সারজিস আলমকে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক মনোনীত করা হয়েছে। সারা দেশকে ২০টি জোনে (এলাকা) ভাগ করে সংগঠকদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছে নাগরিক কমিটি। জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য পদে ধর্মভিত্তিক ছাত্রসংগঠন ও বামপন্থি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের সাবেক নেতারাও রয়েছেন।
গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল নেতৃত্বে ছিলেন সমন্বয়কেরা। প্রথমে ৬৫ জন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক-সহসমন্বয়কের একটি টিম ছিল। পরে ১৫৮ জনের টিম করা হয়। গত ২২ অক্টোবর সেই টিম বিলুপ্ত করে চার সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি করে। এরপর ২১ নভেম্বর ১৮ সদস্যের নির্বাহী কমিটি করা হয়। এখন নির্বাহী কমিটির সদস্য ২২ জন।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সহ মুখপাত্র মুশফিক উস সালেহীন বলেন, মৌলিক পার্থক্যের জায়গা হবে এই দল গণতান্ত্রিক উপায়ে নেতৃত্ব নির্বাচন করা। এখানে পরিবারতন্ত্র প্রাধান্য পাবে না। আমরা মনে করি, দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক চর্চা নিশ্চিত করা গেলেই কেবল জাতীয় পর্যায়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের বিকাশ ঘটানো সম্ভব। তিনি বলেন, পেশিশক্তি নির্ভর রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন ঘটাতে চায় তরুণরা। তাই শিক্ষিত, সমাজ ও রাজনীতি সচেতন মানুষদের সম্পৃক্ত করার চেষ্টা থাকবে। বিগত ১৫ বছরে যারা বিভিন্ন গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত ও সামাজিক অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে ছিলেন, পেশাগত জায়গায় সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন, তাদের নিয়ে দলটির আবির্ভাব হবে।