অর্থনীতিতে অস্বস্তি আগেও ছিল, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ বছরের প্রথমার্ধে তা নিদারুণভাবে টের পেয়েছে; আর সরকার পতনের পর বেরুতে থাকা বড় বড় ক্ষতে সংস্কারের প্রলেপ লাগিয়ে সাধারণের জীবনযাত্রায় স্বস্তি আনার মূল চ্যালেঞ্জের মধ্যে আসছে নতুন বছর।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, নতুন বছরকে তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির পাঠে একটি মাইলফলক বছর হিসেবে পরিচিত করে তুলতে পারেন; অবারিত সুযোগ তাদের সামনে। সাধারণ জনগণসহ সবার আকাঙ্খাও অনিয়মের কলঙ্ক থেকে অর্থনীতিকে মুক্ত করে কল্যাণমূলক দিকে নিয়ে যাওয়ার কাজটি যাতে এবার হয়।
এক বছরেই যে তা আমূল বদলে যাবে তেমনটি ভাবছেন না বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন। বলেন, ২০২৫ এ যে অর্থনীতি একেবারে সচল হয়ে সমৃদ্ধিশীল হয়ে যাবে ওইটা তো সম্ভাবনা খুবই কম। অর্থনীতি ঘুরে যদি দাঁড়াতে পারে এবং সমৃদ্ধির পথে চলা শুরু করতে পারে, তাহলেই বলব আমরা ঠিক আছি।
বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে জোর কদমে ঢুকে যাওয়া চব্বিশের জুলাই-অগাস্টের গণআন্দোলনের সুফল পেতে তাই ২০২৫ সাল অর্থনীতির বিবেচনাতেও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শেষ হতে যাওয়া ঘটনাবহুল বছর যেমন শুরু হয়েছিল নির্বাচনি ডামাডোলে; নতুন বছরেও ভোটের ঢাকঢোল মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে অনেক কিছুর। রাজনীতির মাঠের হাওয়ায় তেমন কথাবার্তা ভেসে বেড়াতে শুরু করেছে। যে কারণে নতুন বছরের অর্থনীতিতে রাজনীতিও থাকবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে।
এদিকে সর্তক দৃষ্টি রেখে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার পূর্ব শর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। এটা নিয়ে অনিশ্চয়তা যদি থেকেই যায়, রাজনৈতিক দলগুলো রাস্তাঘাটে নামা শুরু করে, তখন কিন্তু অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলেই যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আসবে তা বলা যায় না; কিন্তু না থাকলে যে আসবে না, তা নিশ্চয়তা দেওয়া যায়।
এর পাশাপাশি নতুন বছরে ‘খাদ্য সংস্থানে’ গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক হুমায়রা ফেরদৌস। বলেন, মূল্যস্ফীতির চাপ না কমা ও ব্যবসায়ীদের আস্থা না ফেরায় সামনের দিকে বড় চ্যালেঞ্জ হবে খাদ্য সংস্থান। উৎপাদন বাড়াতে না পারলে সমস্যা আরও বাড়বে। কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে যে কোনোভাবেই।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান জোর দিয়েছেন অর্থনীতির শক্ত ভিত তৈরির ওপর। তার মতে, এটি করা গেলে পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। একটু স্বল্প প্রবৃদ্ধি মেনে নিতে হবে আগামী বছরের জন্যও।
নতুন বছরে এজন্য প্রথমেই অর্থনীতির প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রাজস্ব খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে রাজস্ব আহরণ ঊর্ধ্বমুখী রেখে আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতের তাগিদ দেন তিনি।