নতুন ট্রেনে আড়াই ঘণ্টায় ঢাকা, উচ্ছ্বসিত নড়াইলবাসী

পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-খুলনা রুটে চালু হয়েছে নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’। নতুন এই ট্রেনটি বিরতি দিয়েছে নড়াইল স্টেশনেও। প্রথম যাত্রায় যাত্রী হতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত নড়াইলবাসী। এই ট্রেন চলাচল শুরুর মধ্য দিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ হয়েছে। এখন থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবেন নড়াইলবাসী।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৭টা ৩৮ মিনিটে প্রথম ট্রেনটি নড়াইল স্টেশনে পৌঁছায়। চার মিনিট যাত্রাবিরতির পর সকাল ৭টা ৪২ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। প্রথম দিন নির্ধারিত সময়ের আধঘণ্টা পরে ঢাকায় পৌঁছে সকাল সাড়ে দশটায়।

নড়াইল রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল থেকে ঢাকার জন্য ৫০টি সিট বরাদ্দ ছিলো। উদ্বোধনী যাত্রায় ৫০ জন যাত্রীই ট্রেনে ঢাকায় গিয়েছেন। এদিকে নড়াইল থেকে ঢাকায় যেতে পেরে ভীষণ খুশি যাত্রীরাও। কালের সাক্ষী হতে পেরে তাদের মধ্যে ছিলো অন্যরকম অনুভূতি।

এদিন ভোর থেকেই ট্রেন দেখার অপেক্ষায় শত শত মানুষ স্টেশনে ভিড় করেন। খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি সকাল সোয়া সাতটার দিকে নড়াইল স্টেশনে পৌঁছানোর কথা ছিলো। তবে প্রথম দিন হওয়ায় ২০ মিনিটের একটু বেশি দেরিতে স্টেশনে প্রবেশ করে ট্রেন। স্টেশনে পৌঁছানোর পর উপস্থিত উৎসুক জনতা হাত নেড়ে যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানান। যাত্রীরাও হাত নেড়ে উৎসুক জনতাকে শুভেচ্ছা জানান।

ট্রেন যাত্রী মিশকাতুজ্জামান বলেন, এক সময় নড়াইল থেকে বাসে ঢাকায় যেতে ৭-৮ ঘণ্টা সময় লাগত। পদ্মা সেতু ও নড়াইলের মধুমতি সেতু হওয়ার পর ৩-৪ ঘণ্টায় ঢাকা যাওয়া যায়। এখন ট্রেন চালু হওয়ার কারণে আমরা আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা যেতে পারব। আজকে প্রথম যাত্রী হতে পেরে ভীষণ খুশি লাগছে। নড়াইল জেলা যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেল।

আরেক যাত্রী মহিদুল ইসলাম বলেন, আমি প্রথম যাত্রায় ঢাকার টিকিট পেয়ে ভীষণ খুশি। আমি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকতে পেরে ভীষণ খুশি। নড়াইল জেলা এক সময় অবহেলিত থাকলেও এখন আমরা যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে গেলাম। প্রথম দিনে যাত্রী হতে পেরেও খুশি।

নড়াইল শহরের ভওয়াখালী এলাকার ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন বলেন, নড়াইল জেলার ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে কল্পনাও করতে পারিনি। আজ ট্রেন চলাচল করবে শুনে সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এসেছি। আমার মতো শত শত মানুষ স্টেশনে এসেছে। সবার মাঝে অন্যরকম একটা আনন্দ বিরাজ করছে। প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ট্রেন আসার পর কেমন লাগছিলো সে অনুভূতি ভাষায় ব্যক্ত করতে পারব না। ইচ্ছা হচ্ছিলো ঢাকায় চলে যাই।

গণমাধ্যমকর্মী মো. ইমরান হাসান বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ভোর সকালে স্টেশনে এসেছি। পেশাগত জীবনে অনেক নিউজ কাভার করেছি। তবে আজকের নিউজটা কাভার করতে গিয়ে অন্যরকম অনুভূতি। আমরা নড়াইলবাসী এগিয়ে যাচ্ছি। এক সময়ের অবহেলিত জেলা নড়াইল ট্রেন যোগাযোগের আওতায় আসায় ধীরে ধীরে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে। ট্রেন চলাচলের মাধ্যমে আর্থিকসহ সামগ্রিকভাবে নড়াইল জেলা উন্নয়নের দিকে ধাবিত হবে।

নড়াইল রেল স্টেশনে মাস্টার উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, নড়াইলে বাণিজ্যিকভাবে আজ থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হল। এই স্টেশনে প্রথম মাস্টার হতে পেরে আমি গর্বিত। নড়াইল থেকে ঢাকায় স্টেশনের জন্য ৫০টি সিট বরাদ্দ ছিলো। টিকিট চালু হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বিক্রি হয়ে যায়। অনেকে দাঁড়িয়ে ঢাকায় গিয়েছে। প্রথম দিকে অনেক চাহিদা থাকায় প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রীরা টিকিট পায়নি। আশা করা যায় আগামীতে সমস্যা থাকবে না।

Comments (0)
Add Comment