পিটার বাটলারকে আবারও বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ করে আনায় বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন ফুটবলাররা। ১৮ জন বিদ্রোহী ফুটবলার সম্প্রতি এক চিঠিতে বাফুফেকে জানিয়ে দিয়েছেন, বাটলার কোচ থাকলে বাংলাদেশের হয়ে খেলা দূরে থাক, অনুশীলন ক্যাম্পেও অংশ নেবেন না এবং প্রয়োজনে গণ–অবসরে যাবেন।
চিঠিতে বাটলারের বিরুদ্ধে নিজেদের অভিযোগগুলোও তুলে ধরেছেন সাবিনা-মাসুরা-সানজিদারা। সেই চিঠি ইংরেজিতে লেখা ছিল। বাফুফের বিশেষ কমিটি বিদ্রোহী ফুটবলারদের ডেকে জিজ্ঞাসা করেছিল, চিঠিটি কে লিখেছে? সবাই জাপানে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা মাতসুশিমা সুমাইয়ার নাম বলেন। সুমাইয়াও কমিটির সামনে স্বীকার করেছেন, ওই চিঠি তিনিই লিখেছেন।
এ ঘটনার পর থেকেই সুমাইয়ার জীবনে যেন ঘোর অমানিশা নেমে এসেছে, যা ২৩ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ডের কাছে কল্পনাতীত। সুমাইয়া মঙ্গলবার( ৪ ফেব্রুয়ারি) তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন, কয়েক দিনে তিনি অসংখ্যবার ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পেয়েছেন। এতে তিনি মানসিক আঘাত পেয়েছেন।
ফেসবুক স্ট্যাটাসের শুরুতেই সালাম জানিয়ে সুমাইয়া লিখেছেন, ‘আমার নাম মাতসুশিমা সুমাইয়া। আমি বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড়। ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থী হিসেবে আন্তস্কুল প্রতিযোগিতা থেকে শুরু করে মালদ্বীপে লিগ খেলা এবং বাংলাদেশের হয়ে ২০২৪ সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা পর্যন্ত যাত্রাটা আমার কাছে অম্লমধুর ছিল।’
বাংলাদেশের হয়ে এখন পর্যন্ত সাত ম্যাচ খেলা সুমাইয়া আরও লিখেছেন, ‘যখন থেকে আমি এই পথ (ফুটবলকে) বেছে নিয়েছি, আমার স্বপ্ন ছিল তরুণ শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করা, যাদের মা–বাবা চান তারা শুধু পড়াশোনায় মনোনিবেশ করুক। আমি দেখাতে চেয়েছিলাম, (খেলার প্রতি) আবেগ এবং নিবেদন সব প্রতিবন্ধকতা ভেঙে দিতে পারে। এখন এটা ভেবে আমার অনুতাপই হচ্ছে—আমার শিক্ষা, আমার পরিবার, আমার ঈদ, সবকিছু এমন একটি দেশের সেবা করার জন্য, যে দেশ আমাদের লড়াইয়ের প্রশংসা করতে জানে না।’
স্ট্যাটাসের পরের অংশে হুমকি পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন সুমাইয়া, ‘ফুটবল খেলার জন্য আমি আমার মা–বাবার সঙ্গে লড়াই করেছি, শুধু এই বিশ্বাসে যে আমার দেশ আমার পাশে দাঁড়াবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। সত্যিকার অর্থে কেউই একজন ক্রীড়াবিদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা করে না। আমরা যে পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গিয়েছি, সেই পরিস্থিতি সম্পর্কে আমার এবং সতীর্থদের জন্য ইংরেজিতে একটি চিঠি লেখার ন্যূনতম সামর্থ্য আমার আছে। কয়েক দিন ধরে আমি অসংখ্যবার মৃত্যু ও ধর্ষণের হুমকি পেয়েছি। (হুমকিতে) ব্যবহৃত শব্দগুলো আমাকে এমনভাবে ভেঙে দিয়েছে, যা আমি কল্পনাও করিনি।’
সুমাইয়াকে কারা হুমকি দিচ্ছেন, কীভাবে দিচ্ছেন, সে ব্যাপারে ফেসবুক স্ট্যাটাসে কিছু লেখেননি তিনি। নিজের মানসিক অবস্থা বোঝাতে সুমাইয়া স্ট্যাটাসের শেষে লিখেছেন, ‘আমি জানি না, এই মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে আমার কত সময় লাগবে। তবে এটা বলতে চাই, শুধু তাদের স্বপ্ন অনুসরণ করার জন্য আর কাউকে যেন এর মধ্য দিয়ে যেতে না হয়।’