জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল বাংলাদেশের পাশাপাশি কানাডারও নাগরিক। যদিও তিনি বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক হয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বলছে, মনোনয়নকালে তিনি কানাডার নাগরিক ছিলেন।
দ্বৈত নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করে সনদ নেওয়া যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সায়মা ওয়াজেদ সেই সনদ নেননি। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানে না, তিনি দ্বৈত নাগরিক কি না। যদিও ২০০৮ সালের এক প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী কানাডার ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক নয়।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রশ্নটি নৈতিকতার। সায়মা ওয়াজেদ বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে। ডব্লিউএইচওর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক পদে বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে তার মনোনয়নই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। এখন কানাডার নাগরিকত্ব থাকার বিষয়টিও সামনে এল।
দুর্নীতি প্রতিরোধ নিয়ে কাজ করা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক পরিচালক পদে সায়মা ওয়াজেদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে তখনই প্রশ্ন উঠেছিল। তিনি যদি দ্বৈত নাগরিক হয়ে বাংলাদেশের মনোনয়নে ডব্লিউএইচওতে যান, সেটা নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য নয়।
ডব্লিউএইচও নিজেদের কোড অব এথিকসে (নৈতিকতার নীতিমালা) কর্মীদের উদ্দেশে বলেছে, তারা সততাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সায়মা ওয়াজেদকে মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছিল আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে। খ্যাতনামা বিজ্ঞান সাময়িকী ল্যানসেট–এ ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়, ‘এ ধরনের স্বজনপ্রীতি ডব্লিউএইচওর সততা ও বিশ্বাসযোগ্যতার মারাত্মক ক্ষতি করবে।’ যদিও বাংলাদেশ সরকার সেই সমালোচনাকে পাত্তা দেয়নি।
সায়মা ওয়াজেদ ডব্লিউএইচওর ৭৬তম সম্মেলনে (২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর) নেপালের প্রার্থী শম্ভু প্রসাদ আচার্যকে হারিয়ে আঞ্চলিক পরিচালক হন। গত বছরের জানুয়ারিতে তিনি দায়িত্ব নেন। সেই থেকে তিনি ওই পদে রয়েছেন।
নেপাল মনোনীত শম্ভু প্রসাদ আচার্য তখন ডব্লিউএইচওর সদর দপ্তরে একজন পরিচালক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও দক্ষতা সায়মা ওয়াজেদের চেয়ে অনেক বেশি বলে তখন বিভিন্ন নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছিল।
বলা হয়েছিল, শম্ভু প্রসাদের ডব্লিউএইচওতে ৩০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতা রয়েছে। তিনি জনস্বাস্থ্যে একজন ডক্টরেট ডিগ্রিধারী।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে সায়মা ওয়াজেদের কানাডার নাগরিকত্বের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এতে দেখা যায়, ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর কানাডা সরকার তাকে একটি পাসপোর্ট দেয়। ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্টটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০২৮ সালে। ২০২৩ সালে তার নামে পাসপোর্ট রি-ইস্যু করা হয়, অর্থাৎ আবার দেওয়া হয়। এই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হবে ২০৩৩ সালে। পাতা শেষসহ বিভিন্ন কারণে পাসপোর্ট রি-ইস্যু করা হতে পারে।
সায়মা ওয়াজেদ ঠিক কোন বছর কানাডার নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তা জানা যায়নি। তিনি বাংলাদেশি পাসপোর্ট নবায়ন করেন ২০২১ সালের ৩১ মে। এর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ২০৩১ সালের ৩০ মে। কানাডায় নাগরিকত্ব নিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্বের সনদ লাগে কি না জানতে চাইলে পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, নবায়নের ক্ষেত্রে এই সনদ চাওয়া হয় না।