আমিনুল ইসলাম (৬৫) মোবাইল ফোন ব্যবহার শুরু করেন ১০ বছর আগে। শুরুতে তিনি একটি মোবাইল অপারেটরের গ্রাহক ছিলেন। তবে এখন তিনি নিয়েছেন আরো দুটি মোবাইল অপারেটরের সিম। শরীফ আহমেদ (২৮) নামের একজন ২০১৮ সালে প্রথম একটি স্মার্টফোন কিনে গ্রাহক হন দুটি মোবাইল অপারেটরের। বর্তমানে তিনি দুটি ফোন ব্যবহার করছেন, হয়েছেন চারটি অপারেটরের গ্রাহক।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব বলছে, প্রতিনিয়ত দেশে বাড়ছে মোবাইল অপারেটরগুলোর গ্রাহকসংখ্যা। গত ৩০ মাসে মোবাইল অপারেটর গ্রাহক বেড়েছে এক কোটি ৮৮ লাখ ৭৮ হাজার। চলতি বছরের ২৪ জুলাই পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ১৮ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার। আর মাসিক হিসাব করলে প্রতি মাসে গ্রাহক বাড়ছে ছয় লাখ ২৯ হাজার ২৬৬ জন। তবে একই ব্যক্তি একাধিক অপারেটরের গ্রাহক রয়েছেন এই হিসাবের মধ্যে।
২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭২ হাজার। আজ ২৭ ডিসেম্বর বিবিএস ‘বাংলাদেশ সিলেকটেড স্ট্যাটিস্টিকস’ (জুলাই ২০২২) শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করবে। তারা মূলত এসব তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনসহ একাধিক উৎস থেকে।
মোবাইল অপারেটর গ্রাহকের পাশাপাশি বেড়েছে ইন্টারনেট গ্রাহকেরও সংখ্যাও। গত মাসের হিসাব অনুযায়ী দেশে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৬২ লাখ ১০ হাজার। এর মধ্যে মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটি ৫০ লাখ ৭০ হাজার। ব্রডব্যান্ডভিত্তিক ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা এক কোটি ১১ লাখ ৪০ হাজার। ২০১৯ সালে এই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল ৯ কোটি ৯৪ লাখ ২৮ হাজার। এর মধ্যে ৯ কোটি ছিল মোবাইল গ্রাহক, বাকি ৯৪ লাখ ২৮ হাজার ছিল ব্রডব্যান্ডভিত্তিক। সব মিলিয়ে ৩০ মাসে ইন্টারনেট গ্রাহক বেড়েছে দুই কোটি ৬৭ লাখ ৮২ হাজার।
‘বাংলাদেশ সিলেকটেড স্ট্যাটিস্টিকস’-এর প্রতিবেদনে জানানো হবে, দেশে বর্তমানে অপারেটরভেদে গ্রামীণফোনের গ্রাহকের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। গ্রামীণফোনের মোট গ্রাহক রয়েছে আট কোটি ৪৮ লাখ ৫০ হাজার। এর পরেই আছে রবি, তাদের গ্রাহকসংখ্যা পাঁচ কোটি ৪৫ লাখ ৩০ হাজার। তৃতীয় স্থানে আছে বাংলালিংক, তাদের গ্রাহকসংখ্যা তিন কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার এবং সব শেষে আছে টেলিটক, তাদের গ্রাহকসংখ্যা ৬৭ লাখ ৫০ হাজার। ৩০ মাসের হিসাবে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক বেড়েছে গ্রামীণফোনের, সংখ্যার হিসাবে তা ৮৩ লাখ ৮৮ হাজার।
দেশে মোবাইল গ্রাহক বেড়ে যাওয়াকে অর্থনীতির ইতিবাচক দিক বলে মনে করছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘আর্থিক লেনদেন থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্যভিত্তিক সব কিছুতেই মোবাইল ফোনের একটা বড় ভূমিকা রয়েছে। বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত, বিনিয়োগ—সব কিছুকেই সহজ করছে মোবাইল ফোন। সহজ যোগাযোগের ব্যবস্থা করছে মোবাইল ফোন, যার একটা আর্থিক মূল্য আছে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘তবে আমাদের বেশির ভাগ গ্রাহক এখনো স্মার্টফোনের দিকে যেতে পারেনি। শিক্ষার অভাবের সঙ্গে জড়িত আছে টাকার অভাবও। স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারলে হয়তো তাদের সামনে নতুন প্রযুক্তির দ্বার খুলে যেত, যেটা আর্থিক দিক থেকে কিছুটা হলেও ভূমিকা রাখতে পারত। ’
অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখছে মোবাইল ব্যাংকিং
মোবাইল ব্যাংকিং করা প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি মাসে গড়ে মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখছে ১৬ হাজার ৩৭০ টাকা। মোটাদাগে, মোবাইল ব্যাংকিং করে ওই সব প্রতিষ্ঠান খরচ বাদে প্রতি মাসে কমিশন বাবদ সমপরিমাণ অর্থ আয় করে থাকে। ২০২১ সালের জুন মাসে করা ২১৮টি মোবাইল ব্যাংকিং আউটলেটের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এই চিত্র পেয়েছে বিবিএস। ‘নির্বাচিত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডবিষয়ক ছয়টি সমীক্ষার’ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
গ্রামীণ মোবাইল ব্যাংকিং আউটলেটে বিকাশ, নগদ, ইউক্যাশ, মাইক্যাশ, টি-ক্যাশ, এমক্যাশ—এমন বিভিন্ন ধরনের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা আছে। তবে একটি দোকানে কমিশন বাবদ যত আয় হয়, এর দুই-তৃতীয়াংশই আসে বিকাশ থেকে। অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে আছে বিকাশ। ২০১১ সালে বাংলাদেশে প্রথম এমএফএস চালু হয়। বাংলাদেশে এখন প্রায় ১০ লাখ এজেন্ট আউটলেট বা দোকান আছে।