দেশে প্রথমবারের মতো একটি কুকুরের ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করেছেন চিকিৎসকরা। গতকাল সোমবার চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) ভেটেরিনারি ক্লিনিকসের আওতাধীন এসএ কাদেরী টিচিং ভেটেরিনারি হাসপাতালে এ অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়েছে। এতে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ও সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ড. বিবেক চন্দ্র সূত্রধর। তিনি ও তাঁর দলের সদস্যরা পোষা প্রাণীটির শরীর থেকে প্রজনন ক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ (অণ্ডকোষ বা ডিম্বাশয়) অপসারণ করেছেন, যাকে স্পেয়িং বা প্রজনন ক্ষমতার অপারেশন বলা হয়।
চিকিৎসকরা বলছেন, কুকুরের জন্মনিয়ন্ত্রণ করতে হলে কিংবা আহত হলে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। এতে কষ্ট পায় অবলা প্রাণীগুলো; সেরে উঠতেও দেরি হয়। বর্তমান বিশ্বের সমাদৃত ও আধুনিক অস্ত্রোপচার পদ্ধতিগুলোর অন্যতম ল্যাপারোস্কোপি। এ পদ্ধতিতে প্রাণীর অস্ত্রোপচার করা হলে এরা দ্রুত সেরে ওঠে। কষ্টও কম পায়।
অধ্যাপক ড. বিবেক চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারিকে মিনিম্যালি ইনভেসিভ সার্জারি বা কিহোল সার্জারিও বলা হয়। এটি একজন সার্জনের মাধ্যমে জেনারেল অ্যানেসথেশিয়ার সাহায্যে করা হয়। এ পদ্ধতি প্রচলিত সার্জারিগুলোর তুলনায় সহজ। এতে কম কাটাছেঁড়া করতে হয়।
তিনি জানান, সাধারণ অস্ত্রোপচারের সময় একটি প্রাণীকে পুরোপুরি অজ্ঞান করতে হয়। এরপর পুরো পেট কেটে ফেলতে হয়। ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে শরীরের ছোট একটি অংশ অবশ করতে হয়। এরপর ওই স্থানে কাছাকাছি তিনটি ছিদ্র করা হয়। এতেই সহজে সম্পন্ন করা যায় অস্ত্রোপচার। এ ছাড়া এই পদ্ধতিতে ব্যথা কম হয়, সংক্রমণের ঝুঁকিও থাকে না। সাত দিনের মধ্যে অপারেশনের ক্ষত শুকিয়ে যায়। সাধারণ অপারেশন করতে যেখানে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগে, সেখানে এটি করতে সময় লাগে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট।
অধ্যাপক বিবেক চন্দ্র আরও জানান, তিন মাস আগে ল্যাপারোস্কোপিক মেশিনটি বিশ্ববিদ্যালয় কেনে। এর সাহায্যে পরীক্ষামূলক কয়েকটি অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে সোমবার সফল অস্ত্রোপচার হয়। যারা কুকুর লালনপালন করেন, তারা যদি পোষা কুকুরের বিনা ব্যথায় জন্মনিয়ন্ত্রণ করাতে চান, তাহলে আমাদের কাছে নিয়ে এলে আমরা ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার করে দেব। এ ছাড়া সিটি করপোরেশনও বেওয়ারিশ কুকুরের ব্যথাহীন জন্মনিয়ন্ত্রণ করাতে চাইলে তারা করতে পারবে।
তিনি বলেন, ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতি আধুনিক অস্ত্রোপচারের অন্যতম। এ পদ্ধতি এতদিন মানুষের চিকিৎসাসেবায় ব্যবহার হয়ে এলেও এখন প্রাণীর চিকিৎসাসেবায় ব্যবহার হবে। এখানে ছোট প্রাণীর জন্মনিয়ন্ত্রণবিষয়ক অস্ত্রোপচার ছাড়াও পিত্তথলির পাথর অপসারণ, পাকস্থলীর জটিল অপারেশনসহ বিভিন্ন চিকিৎসা ঝুঁকিমুক্তভাবে করা সম্ভব। তবে আমরা শুধু কুকুর ও বিড়ালের ক্ষেত্রে সেবা দিতে পারব।
সিভাসুর সিনিয়র উপপরিচালক (জনসংযোগ ও প্রটোকল) খলিলুর রহমান বলেন, দেশে প্রথমবারের মতো একটি কুকুরের ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি করেছেন সিভাসুর চিকিৎসকরা। এর মধ্য দিয়ে প্রাণিচিকিৎসায় নতুন দিগন্তের সূচনা হলো। পাশাপাশি আরও জটিল অস্ত্রোপচারসহ এ ধরনের নানা প্রাণিচিকিৎসার পথও খুলে গেল।
এর আগে ২০১৯ সালে কুকুরের জন্মনিয়ন্ত্রণে কলকাতায় ল্যাপারোস্কোপিক অস্ত্রোপচার করা হয়।